একটা কথা অস্বীকার করে কোনও লাভ নেই – জরাগ্রস্ত হতে আমরা কেউই চাই না। প্রাণপনে বয়স বাড়াটা ঠেকিয়ে রাখতে চায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মানুষই। সমস্যা হচ্ছে, মুখ, গলা, ছাতি, হাত, পায়ের পাতার মতো অঙ্গে জরার ছাপ সবচেয়ে আগে দেখতে পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন, বয়স বাড়া একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, প্রতিদিন আমাদের যেমন আয়ু আর অভিজ্ঞতা দুইই বাড়ছে, ঠিক তেমনটাই হচ্ছে আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রেও। কম বয়সে কোলাজেন তৈরি আর কোষ বিভাজন, দুটো হারই বেশি থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুটো ক্ষেত্রেই ভাটা পড়ে। ফলে ত্বক যায় আলগা হয়ে, সেই চাকচিক্য থাকে না, বেশি বেশি করে চোখে পড়ে সূর্যের প্রভাবে হওয়া কালো দাগ-ছোপ।
জানেন কি, কুড়ির কোঠায় থাকার সময়েই আপনার মুখে বয়সের ছাপ পড়তে আরম্ভ করতে পারে? রাতারাতি একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন যে বলিরেখা পড়েছে – এমনটা সম্ভব নয়। আর মনে রাখবেন, বাইরে দেখা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই ত্বকের ভিতরে ভিতরে ক্ষতিটা হতে আরম্ভ করে।
নাকের দুই পাশ আর ঠোঁটের চারপাশে সবার আগে বলিরেখা দেখা দেয়, তার পর গলা আর কপালে ভাঁজ দেখা যায় স্পষ্ট। ক্রমশ কালি পড়তে আরম্ভ করে চোখের নিচে। যাঁরা রোদে দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটাতে বাধ্য হন, তাঁদের ক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রাটা বেশি হয়। সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির প্রভাবে ত্বকের গভীরে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলেই পিগমেন্টেশন বা ত্বকের অসমান রঙের সমস্যা শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ক্রমশ ঢিলে হতে আরম্ভ করে।
ত্বকের উপর বয়সের ছাপ কীভাবে পড়বে তা নির্ভর করে আপনার বংশগতির ধারার উপর। যদি পরিবারের অন্যদেরও তাড়াতাড়ি ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে, তা হলে আপনিও তা থেকে বাঁচতে পারবেন না। তবে হ্যাঁ, প্রক্রিয়াটিকে মন্দীভূত করতে বা পিছিয়ে দিতে পারেন অবশ্যই।
জানতে চান, কীভাবে সেটা সম্ভব? প্রথমত, প্রচুর জল খান। ত্বকের আর্দ্রতায় ঘাটতি থাকলে সবচেয়ে দামি ক্রিম মেখেও কিন্তু আপনার সমস্যার সমাধান হবে না। ফল, শাকসবজি, স্যালাড, স্যুপ ইত্যাদি বেশি করে খান। তার অ্যান্টিঅক্সিডান্ট ভালো রাখবে ত্বকের স্বাস্থ্য। ভিটামিন সি এবং ই যেন খাদ্যতালিকায় থাকে, সেদিকটা দেখবেন।
শরীর আর মন দুই-ই ভালো রাখার চেষ্টা করুন। কোনও ক্রনিক সমস্যা থাকলে বা ডিপ্রেশন অথবা অ্যাংজাইটি থাকলে কিন্তু ত্বকের স্বাস্থ্য তাড়াতাড়ি খারাপ হতে আরম্ভ করবে। রোজ খানিকক্ষণ ব্যায়াম করলে হ্যাপি হরমোন সেরোটনিনের ক্ষরণ হয়, তাতে ভালো থাকবে শরীর এবং আপনার ত্বক।
সাপ্লিমেন্ট নয়, চেষ্টা করুন এমন খাবার খেতে যার মাধ্যমে শরীরে পুষ্টি পৌঁছয় পূর্ণমাত্রায়। মাত্রাতিরিক্ত তেল মশলাও একইরকম নিষ্প্রয়োজন – অতিরিক্ত ভাজাভুজি বাড়ায় ব্রণর উৎপাত। সেই সঙ্গে অযথা অজস্র প্রডাক্ট বা কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন না মুখে – তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বাড়ে। ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক সমাধানের উপর।
সাবান বা ফেস ওয়াশের বদলে দুধের সর-ময়দা-কাঁচা হলুদ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। টোনার হিসেবে ব্যবহার করুন গোলাপজল। খুব ভালো মানের তেল লাগান মুখ পরিষ্কার করার পর – তা সিরাম হিসেবে কাজ করবে। তার পর মাখুন ময়েশ্চরাইজ়ার আর সানস্ক্রিন।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গন্ধহীন, রংছাড়া সানস্ক্রিন বেছে নিন। বাইরে থাকলে প্রতি দু’ ঘণ্টা অন্তর আর বাড়িতে বা অফিসে থাকলে দিনের আলো থাকাকালীন অন্তত দু’বার সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করুন। ত্বক যেন কখনও শুকনো বা টানটান না থাকে, তা দেখবেন। তাতে দিনের মধ্যে কয়েকবার ময়েশ্চরাইজ়ার লাগাতে হতে পারে।
স্নানের সময় কোনও নরম সাবান ব্যবহার করুন। ঘষে ঘষে গা মুছবেন না, হালকা ভেজা থাকতে থাকতেই সারা বছর ময়েশ্চরাইজার মাখতে হবে। যাঁরা বাসন মাজেন, তাঁরা চেষ্টা করুন একবারে সব বাসন মেজে নিয়ে হাতে ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নেওয়ার।