একসময়ে মুখ ঢেকে যেত বিজ্ঞাপনে আর আজ এই কোভিডের যুগে মুখ ঢাকা থাকে মাস্কে। বাইরে বেরোনোর পাট যতটা সম্ভব কম, যদি বা কাজেকর্মে কখনও বেরোতে হয়, মাস্ক ছাড়া বেরোনোর প্রশ্নই নেই!
কিন্তু এই মাস্কের চক্করে সাজগোজ আর করা হয় না, মেকআপের সরঞ্জামগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হয় আর দিনের পর দিন সাজগোজ না করতে করতে মনটাও কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে!
কিন্তু এভাবে আর কতদিন! যা বোঝা যাচ্ছে, কতদিনে করোনা বিদায় নেবে তার কোনও ঠিক নেই! এতদিন কি তবে একেবারে সাজগোজ ছাড়া শুকনো মুখে কাটাবেন? নাকি মাস্ক পরা অবস্থাতেও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার চেষ্টাটা চালিয়ে যাবেন?
যদি আপনি দ্বিতীয় অপশনটা বেছে নিয়ে থাকেন, তা হলে আপনারই জন্য আমাদের এই লেখা। কারণ এখানে আমরা জানাচ্ছি মাস্ক পরা অবস্থাতেও সুন্দরী হয়ে ওঠার খুঁটিনাটি!
মুখে হাইড্রেটিং ময়শ্চারাইজার মাখুন
দিনের অনেকটা সময় মাস্ক পরে কাটাতে হলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুখে মাস্কের ঘষা লেগে দাগ হয়ে যেতে পারে, ফোসকার মতো কালো দাগও হয়ে যেতে পারে।
তাই সাধারণ ময়শ্চারাইজারের বদলে একটু ভারী ময়শ্চারাইজার মাখলে সুবিধে হবে। ত্বকের ওপর ময়শ্চারাইজারের পুরু স্তর থাকলে মাস্কের সঙ্গে ত্বকের অতটা ঘষা লাগবে না।
সানস্ক্রিন লাগান
মাস্কে মুখ ঢাকা বলে সানস্ক্রিন বাদ দিচ্ছেন বুঝি? এতে ত্বকের কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে ধারণা আছে? মুখে মাস্ক থাক বা না থাক, আকাশে মেঘ থাক বা রোদ, সানস্ক্রিন কোনওমতেই বাদ দেওয়া যাবে না। আলাদা করে সানস্ক্রিন না মাখলেও ময়শ্চারাইজারে যেন প্রয়োজনীয় মাত্রায় এসপিএফ থাকে, সেটা দেখে নিন।
ফাউন্ডেশনের বদলে বেছে নিন বিবি ক্রিম
মুখে ভারী ফাউন্ডেশন লাগালে তা মাস্কের ঘষায় উঠে যাবে। তাই ফাউন্ডেশনের বদলে বেছে নিন হালকা বিবি ক্রিম। এতেও এসপিএফ থাকলে ভালো হয়। অল্প পরিমাণে বিবি ক্রিম মেখে নিন মুখে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কল থাকলে তা হালকা কনসিলার দিয়ে ঢেকে নিন।
সেটিং পাউডার
মেকআপ করার পর মুখে বুলিয়ে নিন সেটিং পাউডার! লুজ বা ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার হালকা, মুখে বুলিয়ে নিলে মেকআপ মাস্কের ঘষায় চট করে উঠে যাবে না।
জোর দিন চোখের মেকআপে
মুখের অর্ধেকটা যেহেতু মাস্কেই ঢাকা থাকবে, তাই চোখের সাজ দিয়েই বাজিমাত করুন। চোখের পাতায় আইশ্যাডো ছোঁয়াতে ভুলবেন না। ম্যাট আইশ্যাডো পরতে পারেন, আবার একটু বাড়তি নাটকীয়তা চাইলে শিমারি শেডের আইশ্যাডোও পরতে পারেন।
শিমারি শ্যাডোয় আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চোখে একটা আলগা উজ্জ্বলতা এনে দেয়। চোখের নিচের পাতাতেও কাজলের বদলে পরে নিন আইশ্যাডো। চোখ বড় আর উজ্জ্বল দেখাবে। চোখের ভেতরের কোনায় আর ভুরুর হাড়ে সামান্য হাইলাইটার ছুঁইয়ে নিলে ভালো দেখাবে।
ভুরুর যত্ন নিন
মুখ ঢাকা অবস্থায় আপনার চোখ আর ভুরুই নজর কাড়ে সবচেয়ে বেশি। তাই অপরিচ্ছন্ন ভুরু একেবারেই চলবে না। ইদানীং বড় পার্লারগুলোয় সমস্তরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে ভুরু থ্রেডিং করিয়ে নিতে পারেন।
আর অত সাহস যদি না থাকে, তা হলে টুইজার আর ছোট কাঁচি দিয়ে নিজেই শেপ করে নিন ভুরু। বাড়িতে করলে খুব সরু করে ভুরু থ্রেড করতে যাবেন না। টুইজার দিয়ে বাড়তি রোমগুলো তুলে ফেলুন, তারপর সুন্দর করে ব্রাশ করে নিলেই অনেকটা ভদ্রস্থ দেখাবে। ভুরুর কোথাও রোম কম থাকলে আইব্রো পেনসিলের ছোট ছোট স্ট্রোকে এঁকে নেবেন।
মাস্কারার জাদু
চোখ এমনিতেই আপনার মুখের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র, মুখ মাস্কে ঢাকা থাকলে তো আর কথাই নেই! যেভাবে পারেন, চোখদুটো সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন। মোটা করে আইলাইনার পরলে চোখ ছোট দেখাতে পারে, তাই মেকআপ এক্সপার্টরা আইলাইনারের বদলে জোর দিচ্ছেন মাস্কারার ওপর।
চোখের পল্লব আইল্যাশ কার্লার দিয়ে কার্ল করে নিন, তারপর হাত খুলে কালো মাস্কারা লাগান। পল্লবের গোড়ার দিক থেকে ডগার দিকে মাস্কারার ব্রাশ চালাবেন, তাতে চোখ ডেফিনিশন পাবে, বড় আর উজ্জ্বলও দেখাবে।
ঠোঁটে থাক লিপ বাম
আমরা জানি, লিপস্টিক না পরলে আপনার সাজগোজ কমপ্লিট হয় না। কিন্তু মাস্কের নিচে লিপস্টিক পরা মানে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে লিপস্টিক আর ঠোঁটে থাকবে না, বরং মাস্কের ভেতরের দিকটাই রঙিন হয়ে যাবে!
সে কথা আমরা বিলক্ষণ জানি! তাই লিপস্টিক নয়, ঠোঁটে লাগিয়ে নিন লিপ বাম। খুব ইচ্ছে হলে হালকা টিন্টেড লিপ বাম লাগাতে পারেন। তাতে ঠোঁট আর্দ্র থাকবে, কখনও মাস্ক খুললে দেখতেও সুন্দর লাগবে।