হঠাৎ করেই আমাদের বাড়ির বাচ্চাগুলোর জীবন বদলে গিয়েছে অনেকটাই। বাড়ির বাইরে বেরনোর উপায় নেই। বাবা-মা হয় অফিস, নয়তো বাড়ির কাজ সামলাতে ব্যস্ত। রোজগার কম-বেশি সবারই কমেছে, তাই টেনশনের চোরা একটা স্রোতও আছে। তার উপর রয়েছে অনলাইন পড়াশোনার চাপ।
এতদিন সে ঘাড় গুঁজে মোবাইল গেম খেললে বা কার্টুন দেখলে নিশ্চয়ই আপনিই বকাবকি করেছেন? সেখন সেই মোবাইলে বা ল্যাপটপেই চলছে ইশকুলের পাঠ। যন্ত্রটা বন্ধু না শত্রু, সেই হিসেবটাই বেচারার গুলিয়ে যাচ্ছে যে!
একদিকে ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি কমেছে, অন্যদিকে আবার বাচ্চার রাগ বা বায়না সামাল দেওয়ার জন্য তার হাতে গ্যাজেট তুলে দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। এর ফলে খুদে মানুষটি চলমান ছবি আর কানে শোনা যায় এমন শব্দেই আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, পরে বইয়ের দিকে ফেরাতে পারবেন না।
এই পরিস্থিতি কাটানোর জন্য কী করা যায়? এক নম্বর, বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটাতে হবে পরিবারের বড়োদের – দায়িত্বটা বাড়ির সবাই মিলে ভাগ করে নিন। তার মতো করে তার সঙ্গে মিশতে হবে, বন্ধুর অভাব পূরণ করুন। মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে গ্যাজেট পিছিয়ে পড়বেই!
দুই, শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যেকদিন যেন অ্যাকটিভ হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। তা না হলেই হামলা করবে ওবেসিটি ও নানা শারীরিক অসুস্থতা। এমনকী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াও বিচিত্র নয়। তাদের সঙ্গে খেলাধুলো করুন, তাতে আপনারও ব্যায়াম হবে।
তিন, বাচ্চাকে টিভি দেখা বা ভিডিয়ো গেম খেলার সময় একা ছাড়বেন না, তার সঙ্গে আপনিও যোগ দিন। এতে দুটো ব্যাপার হবে – সে কতটা সময় গ্যাজেট ব্যবহার করছে, সেটা আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেই সঙ্গে এটাও জানতে পারবেন, কোন ধরনের কনটেন্টে তার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
চার, প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাকে গল্পের বই পড়ে শোনান। শুরুতে সে বিরক্ত হবে, মন দেবে না। কিন্তু চেষ্টা ছাড়লে চলবে না। গল্প পড়লে শিশুর মন কল্পনাপ্রবণ হয়, সে ভাবতে শেখে। এই প্র্যাকটিস পরবর্তীকালে ভাষা ও সাহিত্যচর্চায় কাজে লাগে।
পাঁচ, অভিভাবক হিসেবে আপনি কতক্ষণ গ্যাজেট ব্যবহার করছেন, সেটাও খতিয়ে দেখুন। বাচ্চার সামনে সবাই মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকাটা কাজের কথা নয়! খেতে বসার সময় ফোন ব্যবহার করবেন না, প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দেখতে অভ্যস্ত হলেও বাচ্চার সামনে সেটা এড়িয়ে চলুন।
ফোটো সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম