অনেকেই বলবেন, লেখাপড়া তো ক্রমশই ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে — তা হলে আর বাচ্চার হাতের লেখা ভালো না খারাপ তা নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করে কী হবে? কিন্তু পরীক্ষা তো এখনও হাতে লিখেই দিতে হয় – তার পর খাতা জমা দেওয়ার পদ্ধতিটা ডিজিটাল হয়েছে ইদানীং। তাতে কিন্তু হাতের লেখার গুরুত্ব একটুও কমেনি।
যদি আপনি একটু তলিয়ে ভাবেন, তা হলে বুঝতে পারবেন যে, মানুষের মোটর স্কিল ডেভেলপ করার সঙ্গে সঙ্গে হাতের লেখাও উন্নত হয়। বাচ্চাকে ছোটো ছোটো কাজ করতে দিন – যেমন রং পেনসিলের বাক্স গোছানো, খেলার পর নিজের পুতুল-গাড়ি ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা। রুমাল বা নিজের পোশাক ভাঁজ করতেও শেখান।
মোটর স্কিল ডেভেলপ করতে আরম্ভ করে বছর তিনেক বয়স থেকে। আপনার বাচ্চা যত অভ্যেসের মধ্যে থাকবে, তত তাড়াতাড়ি এই স্কিল উন্নত হবে। যে শিশু সুন্দর করে নিজের খেলনা গোছাতে পারে, লক্ষ করলে দেখবেন তার হাতের লেখাও ভালো।
ছয়-সাত বছরের মধ্যে পরিষ্কার বোঝা যায় একটি শিশুর হাতের লেখা কেমন হবে। এই সময়টায় স্কুলেও হাতের লেখা প্র্যাকটস করানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়। বাড়িতেও তাকে ছবিতে রং করতে দিন, রঙিন চার লাইনের খাতা কিনে এনে দিলে বাচ্চার হাতের লেখা অভ্যেস করতেও ভালো লাগবে।
লাইনের মধ্যে অক্ষরের মাপ ঠিক কতটা হলে দেখতে ভালো লাগে, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন – সেই মতো সন্তানকেও শেখান। হাতের লেখা খারাপ হয় অক্ষরের মাপে গন্ডগোল হলে। লাইন ভরে লেখা বা ছবির একেবারে সীমানা ঘেঁষে রং ভরা খুব গুরুত্বপূর্ণ – এগুলি ঠিকভাবে করতে শিখলে শিশুর ফোকাস উন্নত হয়।
বাচ্চার জন্য এমন পেনসিল কিনুন যা তার আঙুলের উপর বাড়তি চাপ ফেলবে না। লেখার ছাপ কি পরের পাতায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে? তা হলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোর দিয়ে বাচ্চা লিখছে – এতে হাতে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। লেখার সময় পিঠ সোজা করে বসান, হাত এমনভাবে রাখতে হবে যাতে কনুইয়ে ঠেকা দিয়ে রাখা যায়।
গ্রিপ নিয়ে গোড়াতেই ভাবনাচিন্তা করার দরকার নেই, এক একজনের পেন বা পেনসিল ধরার কায়দা এক এক রকম। ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ার সময়েই বুঝতে পারবেন আপনার সন্তান কীভাবে পেনসিল ধরবে। কেউ বাঁহাতি হলে তাকে ডান হাতে পেনসিল ধরার জন্য চাপ দেবেন না।
একটু বড়ো বয়সে বা কিশোরবেলায় কি হাতের লেখা শোধরানো যায়? যে কোনও বয়সেই একটু সচেতন হলে আপনি হাতের লেখা বদলে ফেলতে পারবেন। তবে দেখতে হবে ঠিক কোন কারণে হাতের লেখাটা দেখতে খারাপ লাগছে। লেখার মাঝে স্পেসিং ঠিক নেই? নাকি অক্ষরগুলো মাপসই হচ্ছে না – সেই বুঝে অভ্যেস করলেই লেখা ফের ভালো হবে।
হাতের লেখা ভালো না হলে কিন্তু পরীক্ষার ফলে তার ছাপ পড়তে বাধ্য! খুব ছোটো ছোটো, চাপ বেঁধে থাকা লেখা পড়তে পরীক্ষকের কষ্ট হবে। আবার বিরাট বড়ো, ধ্যাবড়া লেখাও দেখতে ভালো লাগে না। তাই মাঝামাঝি একটা রাস্তা খুঁজে বের করতে হলে হাতের লেখা অভ্যেস করা ছাড়া গতি নেই আর।
তবে সেই সঙ্গে অভিভাবকরা একটা পজিটিভ পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বাচ্চাকে বেশি বকাঝকা করলে কিন্তু তার আগ্রহ আরও কমবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাকে সাহস জোগান, পাশে থাকুন – হাতের লেখা উন্নত হতে বাধ্য!