আজ বিশ্ব যোগ দিবস। শুধু ভারত নয়, সারা দুনিয়ায় যোগব্যায়াম নিয়ে হালে খুব আগ্রহ তৈরি হয়েছে, আন্তর্জাতিক সেলেব্রিটিরাও এই প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রের ভক্ত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু যোগ নিয়ে অনেক ভুল ধারণাও চালু আছে। আপনি আবার তেমন কোনও বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে পড়েননি তো?
১. শরীর অত্যন্ত ফ্লেক্সিবল না হলে যোগব্যায়াম করা যায় না
অনেকেই ভাবেন দুরূহ মুদ্রা বা অতি কঠিন সব প্যাঁচ পয়জার না জানলে যোগশিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। আসন হচ্ছে যোগের একটা অঙ্গ মাত্র – স্রেফ শারীরিক মুদ্রা দিয়ে যোগবিদ্যার গভীরতা মাপা যায় না। তাই ইনস্টাগ্রামে চিত্রতারকা বা স্বঘোষিত যোগগুরুরা কী করছেন, তা নিয়ে বেশি ভাববেন না। অষ্টাঙ্গ যোগশিক্ষায় প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান, সমাধি, নিয়ম ইত্যাদি আরও অনেক জটিল বিষয় আছে। সোজা কথায়, যে কোনও বয়সে এবং শারীরিক অবস্থায় যোগ ব্যায়াম শুরু করা যায়। তা আপনার শারীরিক ও মানসিক উন্নতিসাধন ঘটায়।
২. যোগব্যায়ামের ফল পেতে গেলে লাইফস্টাইলে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে
তেমন কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। হ্যাঁ, এ কথা বলা হয় যে যোগশিক্ষার পাশাপাশি যদি আপনি খাদ্যাভ্যাসে কিছু বদল নিয়ে আসতে পারেন, বিশেষ করে জাঙ্ক ফুড, ভাজাভুজি, মদ্যপান বা অতিরিক্ত আমিষ খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করতে পারেন, তা হলে নিজেই বুঝবেন যে শরীর কত ভালো আছে। কিন্তু তা ছাড়াও যোগাভ্যাস করা যায়।
৩. আর পাঁচটা ব্যায়ামের পদ্ধতির সঙ্গে যোগের পার্থক্য নেই
ভুল ধারণা। যোগ স্রেফ ব্যায়াম নয় – তাই কেবল ওজন কমানোর উদ্দেশ্য নিয়ে তা শুরু করবেন না। যোগ আসলে মনকে ধ্যানের জন্য প্রস্তুত করার আগে অভ্যেস করা হত প্রাচীন ভারতে — শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের সব টক্সিন বেরিয়ে গিয়ে তা ঝরঝরে হয়ে গেলে ধ্যানে মনঃসংযোগ করা সহজ হয়। তাই যদি ঠিকভাবে যোগাভ্যাস করেন, তা হলে মন আর শরীর দুইই হালকা হবে। ওজন কমানোর জন্য আগে মনকে প্রস্তুত করতে হয়, রাশ টানতে হয় খাওয়াদাওয়ায়। কেউ যদি দিনে আধ ঘণ্টা যোগাভ্যাস করে যা ইচ্ছে খেতে থাকেন, তা হলে জীবনেও ওজন কমার আশা নেই।
৪. সেলেব্রিটিদের ভিডিও দেখে বা বই পড়েই যোগ শিখে ফেলা যায়
ভুল ধারণা। যোগ একান্তভাবেই গুরুমুখি বিদ্যা। তা ছাড়া আপনার কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে বা একটু বেশি বয়সে শুরু করলে তো অবশ্যই গুরুর সাহায্য নেওয়া উচিত। তিনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য বুঝে শিক্ষাদান শুরু করবেন। যত খুশি বই পড়ুন বা ভিডিও দেখুন, অনুপ্রাণিত হোন – কিন্তু মেনে চলুন কেবলমাত্র গুরুর নির্দেশ – না হলে ব্যথা পেতে পারেন।
৫. স্ট্রেস কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় যোগাভ্যাস
এমন একটা কথায় বিশ্বাস করলে আপনি আসলে যোগের ক্ষমতাকে ছোটো করে দেখবেন। হ্যাঁ, যোগব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমে, কিন্তু সেটা ম্যাজিক সমাধান নয়। যোগ আপনার চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন আনতে পারে, শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। কিন্তু তার জন্য আপনাকে অনেক কিছু ছাড়তে হবে, মন সংহত করতে হবে। স্ট্রেস হয়তো কমবে, মনে আনন্দ ফিরবে, শরীর সুস্থ হবে – কিন্তু তার জন্য সময় দিতে হবে।
৬. যোগ ব্যায়াম স্ট্রেচিং ছাড়া কিছু নয়
যাঁরা জিমে যান, তাঁরা হয়তো এই কথা শুনে থাকবেন। হ্যাঁ, ভালো গুরুর দেখা পেলে এবং আপনি নিজে উৎসাহী শিক্ষার্থী হলে হয়তো মাসল স্ট্রেচিংয়ের সুবিধে পাবেন, আপনার ব্যালেন্স করার ক্ষমতা উন্নত হবে – কিন্তু স্রেফ স্ট্রেচিং হিসেবেই দেখবেন না যোগব্যায়ামকে। তা আরও অনেক গভীরভাবে মেরামত করে আপনার শরীরকে।