যে কোনও মা-বাবাই চান সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু তা তো আর রাতারাতি হয় না — বড়ো হওয়ার প্রতিটি ধাপে তাকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি চিনিয়ে দিতে হবে আপনাকেই। জেনে রাখবেন যে সন্তানকে যদি আপনি বন্ধু ভাবেন, তার সুখ-দুঃখ, হার-জিতের শরিক হয়ে উঠতে পারেন, তা হলে সে-ও কোনওদিন আপনাকে ছেড়ে যাবে না।
১. জীবনে সব কিছু আগে থেকে প্ল্যান করে রাখা যায় না, চান্স নিতে হয়: যে যতই হিসেবি হোক, পুরো জীবনটা আগে থেকে প্ল্যান করে কাটানো অসম্ভব। এমন অনেক পরিস্থিতি আসবে যেখানে হয়তো সে ভুল সিদ্ধান্ত নেবে এবং পরবর্তীকালে তার মাসুল দিতে হবে। কিন্তু তাতে মন ছোটো করার কিছু নেই। ভুল থেকে মানুষ অনেক কিছু শেখে। তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, স্রেফ নিজের ভুলেই মানুষ বিপদে পড়ে নয়া, দেশ, কাল, বন্ধু, পারিপার্শ্বিকের কারণেও পিছিয়ে পড়তে হয়। সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার মতো মনের জোর থাকা উচিত – ঝুঁকি নিতে ভয় পেলে চলবে না।
২. সাফল্য আর ব্যর্থতার কোনও সংজ্ঞা হয় না: অর্থ, মান-যশ, প্রতিপত্তি, ভালো রেজাল্ট, ভালো কলেজ – কোনও কিছু দিয়েই সাফল্য বা ব্যর্থতাকে ব্যাখ্যা করা যায় না। দিনের শেষে খুশি থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। আর নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার স্বাধীনতা যেন থাকে – সেটাও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। টাকাপয়সা সামলে রাখতে শিখতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করার অভ্যেস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। রোজগার করতে শিখেই প্রথমে মন দিতে হবে সঞ্চয়ে – তাতে টাকাপয়সার অভাব মাথায় চড়ে বসবে না।
৩. অপচয় অতি বদ অভ্যেস: সময়, টাকাপয়সা, খাবার, সম্পর্ক – কোনও ক্ষেত্রেই যেন অপচয় প্রশ্রয় না পায়। সন্তানকে খরচের ব্যাপারে সংযত হতে শেখান – পড়ার সময় মন দিয়ে পড়া, খেলার সময় খেলার অভ্যেস থাকা জরুরি। পেটে অল্প খিদে থাকলেও জীবন কেটে যাবে, কিন্তু খাবার ফেলা উচিত নয় একেবারেই। দরকারে সন্তানকে প্রয়োজনের চেয়ে কম টাকা বা অবসর দিন। অভাবের সঙ্গে আনন্দের কোনও বিরোধ নেই, সেটা সব বাচ্চার শেখা দরকার।
৪. সব মানুষের ভুল হয়: হ্যাঁ, আমরা সবাই ভুল করি। তার ফলে যদি কখনও জীবন ফের নতুন করে শুরু করতে হয়, হবে। ১৮ বা ২০ বছর বয়সে যার মনে হয়েছিল সে ডাক্তারি পড়বে সে ৩০ এ পৌঁছে বিজ্ঞাপনের কাজ করতেই পারে! তাতে অসুবিধের কিছু নেই। যদি মনে হয় ভুল সম্পর্কের জালে জড়িয়ে পড়েছে, তা থেকে বেরিয়ে নতুনভাবে সব শুরু করাই যায়। জীবন একটাই। তার পুরোটা একই খাতে বইতে পারে, আবার না-ও পারে। ক্লোনও কিছুতেই ভেঙে পড়া ঠিক নয়। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজেকে – কারও কথায় বা মতবাদে প্রভাবিত হওয়া মানে নিজস্বতা হারানো।
৫. সততার বিকল্প নেই: মিথ্যে বললে সাময়িক কিছু সুবিধে হতে পারে, কিন্তু পরবর্তীকালে বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর আশঙ্কা থেকে যায়। তাই যতটা সম্ভব সত্যি বলা উচিত। তাতে কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধে হতে পারে, মাথা নিচু করতে হবে না।