অধিকাংশ টিনএজারকে নিয়েই নানা সমস্যায় ভোগেন তাদের বাবা-মা বা শিক্ষক-শিক্ষিকা। তারা কথা শোনে না, জোর গলায় নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ জাহির করে। বাড়ির থেকে বন্ধুদের বেশি আপ্ন বলে মনে করে। এই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার উপার একটাই – ধৈর্য ধরা।
অনেক সময়েই বাবা-মায়ের সবচেয়ে বড়ো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সন্তানের খারাপ রেজাল্ট। ছেলে বা মেয়ে হয়তো সারাক্ষণ ভিডিয়ো গেম খেলতে ব্যস্ত বা সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটিং করছে – কিন্তু কিছুতেই পড়তে বসছে না। ফলে পরীক্ষায় নম্বর কম হচ্ছে। এখন তো আবার অনলাইন ক্লাসের যুগ – তাই কোন ফাঁকে যে বাচ্চা পড়ছে আর কখন আড্ডা দিচ্ছে তা বোঝা আরও মুশকিল।
এই পরিস্থিতিতে রাগ করে বাচ্চাকে বকবেন না, কারণ তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। পড়াশোনায় মন না বসার নানা কারণ থাকে। প্রথমেই দেখুন সে ক্লাসে, বাড়িতে, বন্ধুদের আড্ডায় কোথাও কোনওরকম অ্যাবিউসের শিকার হচ্ছে কিনা। তাতে শরীর বা মনের উপর কোনওরকম চাপ পড়ছে কিনা। অনেক সময় শিক্ষকরাও কিন্তু বাচ্চাকে অপ্রয়োজনে বকাবকি করেন – তাঁরাও মানুষ, ভুল তাঁদেরও হয়। তেমন পরিস্থিতি হলে আপনাকেই ত্রাতার ভূমিকায় নামতে হবে। রাতারাতি কেউ লেখাপড়ায় আগ্রহ হারায় না, তার পিছনে কোনও না কোনও কারণ থাকে।
সব বাচ্চার বুদ্ধি সমান হয় না, কেউ তাড়াতাড়ি শেখে, কারও সময় লাগে বেশি। টিনএজে এসেই মানুষ বুঝতে পারে কোন বিষয়ে তার আগ্রহ আছে, কোনটায় নেই। যে বিষয়টা পড়তে ভালো লাগে না, সেটা যে ছেড়ে দিতে নেই বরং আরও বেশি করে পড়া উচিত, সেই বোধটা একটা ১২-১৩ বছরের বাচ্চার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আপনাকে সমস্যা বুঝে সেই মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। শেখাতে হবে যে জীবনে অনেক কিছুই ভালো না লাগা সত্ত্বেও করা উচিত, কারণ তা কাজে দেয়।
বাচ্চাকে বোঝান, পরিস্থিতি যাই হোক আপনি তার সঙ্গে আছেন। এটা কিন্তু স্রেফ মুখে বললেই হবে না, আপনাকে তা ভিতর থেকে মানতে হবে। করোনার কারণে আমরা যারা পরিণত বয়স্ক, তারাই কেবল অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছি তা নয়। আমাদের বাচ্চাগুলিও একইভাবে মানসিক চাপের শিকার, তার পর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও বন্ধ। তাদের সমস্যাগুলোও নেহাত উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয় কিন্তু!
বন্ধুদের সঙ্গে রাতদিন চ্যাটিং করছে বলে বকাঝকা না করে বরং নিজেই মাঝে মাঝে তার বন্ধুদের খোঁজ নিন। গেম খেলা আর চ্যাটিংয়ের জন্য একটা সময় বরাদ্দ করে দিন, সঙ্গে শর্ত দিন যে এই সময়ের বাইরে পড়াশোনাটা ঠিকভাবে করতে হবে। তার আবদার রাখুন – সেও আপনাকে ফিরিয়ে দেবে না।
বাচ্চা কোনও কুসঙ্গে পড়েছে কিনা সে খোঁজ নিন। সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটালে বা গল্পগুজব করলে আপনি তার বন্ধুবান্ধবদের সম্পর্কে সব তথ্যই পাবেন মোটামুটি। তা না হলে এবার খোঁজ নেওয়ার সময় এসেছে। বাচ্চারা বাবা-মায়ের থেকে সময় চায়, অ্যাটেনশন চায়। তা দিতে ব্যর্থ হলে সে ঠিক কাউকে খুঁজে নেবে। সেখান থেকে কিন্তু আরও অনেক বিপদ আসতে পারে, তাই সজাগ থাকতে হবে।
সন্তানের উপর অহেতুক চাপ তৈরি করার ভুলটা করবেন না। স্কুল বা বোর্ডের পরীক্ষার বাইরেও জীবন অনেক বড়ো। ভালোভাবে বেঁচে থাকতে শেখাটা অনেক বেশি জরুরি। আমরা এমন একটা সমাজে বড়ো হয়েছি, যেখানে সন্তানকে শাসন করাটাই দস্তুর। অনেক নিয়মই তো বদলাচ্ছে, এই একটাও বদলে দেখুন না কী হয়!