আপনার বাড়িতে স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা আছে? তা হলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আপনি না হলেও অন্য কেউ নির্ঘাত ফোন পেয়েছেন — দূরভাষের অন্য প্রান্তে থাকা মানুষটি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এক্ষুনি কোডিং না শিখলে তার জীবন বৃথা। আর দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে খুব আগুপিছু না ভেবে আপনিও আর একটি টিউশন জুড়ে দিয়েছেন তার পিছনে?
এর পাশাপাশি আবার অনেকে আছেন যাঁরা এখনও বোঝেননি বিষয়টা কী এবং দ্বিধায় ভুগছেন। বুঝতে পারছেন না কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাঁদের জন্য আমরা হাজির করেছি একটি সহজ-পাঠ। জেনে নিন কাকে বলে কোডিং এবং তা কোন কোন কাজে লাগতে পারে পরবর্তীকালে।
কোডিং একটি ভাষা, তা সৃজনশীলতা বাড়ায়
কোনও ভাষা শিখে ফেলার পর আমরা কী করি বলুন তো? নিজের মনের ভাব প্রকাশ করি সুন্দরভাবে — ঠিক কিনা? ভাষার উপর যাঁর দখল বেশি, তিনি তত গুছিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। কোডিং হচ্ছে কম্পিউটারের ভাষা। আপনার বাচ্চা তা শিখলে কেবল টেকনোলজির উপভোক্তা হবে না, নির্মাতা হয়ে উঠবে। বাড়বে তার ক্রিয়েটিভিটি। বিদেশের অনেক স্কুলে তো একেবারে কিন্ডারগার্টেন স্তর থেকে কোডিং শেখানো হয়!
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে উঠবে
কোড করার সময় খুব জটিল সমস্যাকেও ভেঙে ফেলা হয় একেবারে ছোটো ছোটো অংশে। ছেলেবেলা থেকে এইভাবে ভাবতে শিখলে বাচ্চাও যে কোনও সমস্যার মুখোমুখি হলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তার সমাধানে পৌঁছনোর চেষ্টা করবে। ক্রমশ বাড়বে লজিকাল চিন্তাভাবনার ধার। একটি কম্পিউটার যে পদ্ধতিতে চিন্তা করে, তা গড়ে ওঠে যুক্তির উপর ভরসা করে। ঠিক সেভাবেই, বাচ্চার কগনিটিভ স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয় কোড করতে শিখলে।
আপনার বাচ্চার মনঃসংযোগের সমস্যা আছে?
সেক্ষেত্রে কিন্তু কোডিং কাজে দিতে পারে। যে কোনও ভাষা শিক্ষার মতোই কোডিংও খুব চ্যালেঞ্জিং। বার বার ভুল হবে, সমাধানে পৌঁছতে দেরি হবে — তবে উৎসাহ পেয়ে গেলে আবার সে শেষ না দেখে ছাড়বে না। তাতে ক্রমশ মনোযোগ বাড়বে, সমস্যার মুখামুখি দাঁড়িয়ে সে মেজাজ হারাবে না। আত্মীয়-বন্ধুহীন সমাজে যে শিশুগুলিকে নিজের লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে, তাদের জন্য এটা কতটা কাজে দেবে বুঝতে পারছেন?
স্ট্রাকচারাল ও অ্যালগরিদমিক চিন্তাভাবনা পোক্ত করে দেয় কোডিং
যে কোনও সমস্যা বা কাজকে কয়েকটি ধাপে ভেঙে নেওয়াই হচ্ছে অ্যালগরিদমিক পদ্ধতি। এবার এই ছোটো ছোটো অংশগুলোকে জুড়ে জুড়ে তৈরি হয় পূর্ণ কোড। যে কোনও বয়সে এসেই বিষয়টা শেখা যায়, তবে ছেলেবেলা থেকে শিখলে জীবনকে তা দারুণভাবে প্রভাবিত করে। তারা অঙ্ক করা ও শেখার গুরুত্বটাও বুঝতে পারে।
একটা ব্যাপার অস্বীকার করে লাভ নেই — যত দিন যাবে, তত বাড়বে কোডিংয়ের গুরুত্ব। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে শাসন করছে এখনই, আগামীদিনে কী হতে চলেছে, ভাবতে পারছেন? বাচ্চারা যে কোনও ভাষা শিখে ফেলে খুব তাড়াতাড়ি, তাই শিশুকালেই হাতেখড়ি হওয়া ভালো! তবে সেই সঙ্গে এ বিষয়টাও খেয়াল রাখবেন যে, জেদ করে চাপিয়ে দিয়ে কোনও কিছুই হয় না — বাচ্চা যদি আগ্রহ না পায়, তা হলে কিন্তু জোর করবেন না ভুল করেও!