একটা কথা গোড়াতেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো, মিথ্যে আমরা সবাই কম-বেশি বলি। এবার আপনি কাকে কতটা মিথ্যে কথা বলেন বা বলা উচিত বলে ভাবেন — সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বেঁচে থাকার নিয়মটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই আলাদা হয় — আপনি নিজেকে কোথায় কতটা প্রকাশ করবেন, কতটা আড়ালে রাখবেন সে সিদ্ধান্ত একেবারেই আপনার নিজের। তারই ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে সত্য বা অসত্যের পরিমাণ।
কখনও নিজেকে মিথ্যে বলবেন না
এই ভুলটা করলে আসলে আপনি একটা সময়ে মানসিক স্থিতি হারাবেন। নিজেকে যে ভুল বোঝায়, সে আসলে চোরাবালিতে ডুবছে – নাক-মুখে বালি ঢুকে দম বন্ধ করে মেরে ফেলবে একটা সময়ে। আপনার আর্থিক পরিস্থিতি, সম্পর্ক, অসহায়তা, আক্ষেপ, লোভ, ইচ্ছে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা – সব কিছুর সত্যিটা নিজের জানা উচিত। সেটা মানতে অসুবিধে হলেও আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে।
কাছের মানুষকে যতটা বেশি সম্ভব, ততটা সত্যি বলুন
মনোবিদরা বলেন, মানুষ তার নিজের চারপাশ ঘিরে অন্তত গোটা তিনেক বৃত্ত কেটে নেয়। আর নিজেকে কেন্দ্র করে নির্মল, বিশুদ্ধ একটা পরিমন্ডল গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। আপনার সবচাইতে কাছের বৃত্তে যাঁরা আছেন, তাঁরা একেবারেই নিকটজন। তাঁদের যতটা সম্ভব সত্যি বলুন। তা না হলে কী হবে জানেন? আপনি মানুষটা আসলে কেমন, সেটা তাঁরা বুঝবেন না। বৃত্তের বাইরের দিকে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সত্যি যদি কাছের মানুষকে আঘাত করে, তা হলে কি মিথ্যে বলা উচিত?
এই সিদ্ধান্তটা একেবারে আপনার নিজের – সেই সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা উচিত। ধরুন, আপনি বিবাহিত এবং খুব সুখি একজন মানুষ। মাঝে কিছুদিন আপনার একটি প্রেমের সম্পর্ক হয়েছিল, কিন্তু তা কোনওভাবে আপনার ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলেনি। এই কথাটা কি আপনার স্বামী/স্ত্রীর জানা উচিত? এ হচ্ছে এমন প্রশ্ন, যার একটা উত্তর হয় না। এই পরিস্থিতিতে সেরা সিদ্ধান্ত কী হতে পারে সেটা একমাত্র আপনিই জানেন, বাইরের কারও কথায় প্রভাবিত হবেন না। চেষ্টা করুন সংসারের ভারসাম্য বজায় রেখে চলার।
অর্ধ সত্য বলা মানেই কি মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া?
দুটো আলাদা বিষয়। এক্ষেত্রেও এক বাক্যে ব্যাপারটা সেরে দেওয়া সম্ভব নয়। নানা রকম পরিস্থিতিতে মানুষ আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রেও আপনি খুব কাছের জনকে যতটা সম্ভব সত্যি বলুন – সেটাই সেরা রাস্তা।
মিথ্যের উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন না
কারণ তার মাঝে মধ্যে প্রচুর ফাঁক থেকে যাবে, সেগুলো কোনওভাবেই ভরা যাবে না। একদিন আপনি ধরা পড়বেন, সম্পর্ক ভাঙবে এবং আপনাকে আর কেউ কোনওদিন বিশ্বাস করবে না। মাইনে কমে গিয়েছে? প্রেম ভেঙে গিয়েছে? নতুন কাউকে ভালো লেগেছে? কানের হিরের দুল হারিয়ে গিয়েছে? জমির দলিল খুঁজে পাচ্ছেন না? সবচেয়ে নিকটজনকে সত্যিটা বলে রাখুন।
তোষামোদ আর মিথ্যে কি এক?
পুরো এক নয়। অফিসে বা বাড়ির লোকের মন জুগিয়ে চলতে মাঝে মাঝে তোষামোদ করতেই হয়, কিন্তু সেটা যদি আপনার অভ্যেসে পরিণত হয়, তা হলে মুশকিল। একটা সময়ে লোকে আপনার কথা সিরিয়াসলি নেওয়া বন্ধ করে দেবে। তাই খুব কাছের মানুষের সঙ্গে তোষামোদি করার দরকার নেই, তা ছাড়া কখন থামতে হবে সেটাও জানা উচিত।
নিজের অপছন্দ জানাবেন, না হাসি মুখে মেনে নেবেন?
অন্যের সব কথা, সব কাজ হাসিমুখে মেনে নিলেও কিন্তু আপনি তাকে পুরো খুশি করতে পারবেন না! তাই যদি সত্য আর নিজের সাহস/ ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হয়, তা হলে দ্বিতীয়টি সেরা পছন্দ হওয়া উচিত বলে আমাদের মনে হয়।
অন্যেরাও যে আপনাকে অল্পবিস্তর মিথ্যে বলেন, তা মেনে নিন
আপনি নিজে যা করছেন, অন্যের থেকে তার চেয়ে বেশি কিছু আশা করবেন না। আপনার খুব কাছের মানুষেরাও আপনাকে নানা সময়ে অল্পবিস্তর মিথ্যে বলেনই – তা নিয়ে অযথা মন খারাপ করার কোনও মানে নেই কিন্তু!
জানেন তো, বাচ্চারাও কিন্তু মিথ্যে বলে!
বাচ্চারাও বুঝতে পারে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে বাঁচাতে হবে, সেই অনুযায়ী সত্যিটা নিজের নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে নেয় তারা। তাই শিশুরা সর্বদা সত্য বলে, এমন একটা বিশ্বাস আঁকড়ে বসে থাকবেন না – বিশেষ করে সে যদি অন্য কোনও বাচ্চার নামে অভিযোগ জানায়।