অতিমারীর হামলার পরে এলোমেলো হয়ে গেছে অনেক কিছুই। ক্লাসে বসে পড়াশোনার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে মোবাইল বা কম্পিউটারের চৌকোনা স্ক্রিন। ঘুরে ঘুরে বাজার করার বদলে মানুষ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন অনলাইন শপিং আর হোম ডেলিভারি। চাকরি ক্ষেত্রও তার ব্যতিক্রম নয়। অতিমারির কারণে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এক বিপুল সংখ্যক মানুষ। শূন্যস্থানে কর্মীনিয়োগও বন্ধ রেখেছে সংস্থাগুলো। পূর্ণ সময়ের কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে অল্প সময় অর্থাৎ পার্ট টাইম কর্মী নিচ্ছে অনেক সংস্থা। স্বাভাবিকভাবেই সুযোগ বেড়েছে ফ্রিলান্সিংয়ের। এমনিতে ফ্রিলান্স কাজের চল বহুদিন ধরে থাকলেও ইদানীং অতিমারীর প্রভাব ও চাকরির বাজারে টানাটানির সুবাদে ঘরে বসে স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়ে গেছে। তাই ফ্রিলান্স কাজ নিয়ে চিন্তাভাবনার পরিসরও বেড়েছে। অনেকেই পুরো সময়ের চাকরির পরিবর্তে ফ্রিলান্স করছেন বা করার কথা ভাবছেন। আবার অনেকে বাড়তি রোজগারের আশাতেও ফ্রিলান্সিংয়ের রাস্তায় হাঁটছেন।
ইচ্ছে করলে স্থায়ী চাকরির পরিবর্তে বা বাড়তি আয়ের জন্য ফ্রিলান্সিংয়ের পথ বেছে নিতে পারেন আপনিও। শুধু মাথায় রাখবেন কিছু জরুরি বিষয়।
এমন বিষয় বেছে নিন যাতে সত্যিই আপনার দখল রয়েছে। ধরা যাক, আপনি ফোটোগ্রাফিতে খুব ভালো। সে ক্ষেত্রে এই বিভাগেই ফ্রিলান্স কাজ খুঁজুন। পরিচিত কেউ লেখালিখি বা গ্রাফিক্স নিয়ে সফলভাবে ফ্রিলান্সিং করছেন বলে তাঁর দেখাদেখি একই ক্ষেত্রে ঝুঁকবেন না।
প্রয়োজনে নিজের দক্ষতার ক্ষেত্রে একটি ছোট কোর্স করে নিন। সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা থাকলে ফ্রিলান্স কাজ পেতে সুবিধে হবে।
ঘরে চুপ করে বসে থাকলে কাজ আসবে না। পরিচিতির গণ্ডি বাড়ান। সোশাল মিডিয়ার সাহায্য নিন। নিজের কিছু কাজের নমুনা দিয়ে সবাইকে জানান আপনি কাজ করতে চান। ছোট-বড়ো কোনও পরিচিতিই বাদ দেবেন না।
যাঁরা সদ্য ফ্রিলান্সিংয়ের জগতে এসেছেন বা আসতে চান, তাঁরা নিজেদের আগের কাজের স্যাম্পল দিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করুন। নতুন কাজ পেলে তা আপডেট করে দিন পোর্টফোলিওয়।
পেশাগত পরিচিতি বাড়ান। লিঙ্কডইনের মতো প্রফেশনাল সোশাল সাইটে নিজের সিভি আপলোড করে রাখুন, কাজের স্যাম্পলও শেয়ার করুন। এ সব জায়গায় আপনি একই পেশার একাধিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন, এবং এখান থেকে কাজ আসতে পারে।
ইন্টারনেটে খুঁজলে আপওয়ার্ক, গুরু, ভাইবারের মতো অনেক ফ্রিলান্সিং জবসাইট পাবেন। এখানে নানাধরনের কাজের খোঁজ পাওয়া যায়। কাজের স্যাম্পল সহ সিভি আপলোড করে রাখতে পারেন। তবে এ সব প্ল্যাটফর্মে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা রয়েছে, কাজেই অসম্ভব ধৈর্য না থাকলে টিকে থাকা মুশকিল।
যে কোনও কাজের সঙ্গেই জড়িত থাকে পারিশ্রমিক। ভারতে ফ্রিলান্সিংয়ের ক্ষেত্রটা একেবারেই সংগঠিত নয়, ফলে অনেক সময়ই পারিশ্রমিক কমিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন ফ্রিলান্সারেরা। এতে একদিকে যেমন তাঁরা ক্ষতির সম্মুখীন হন, তেমনি সার্বিকভাবেও কাজের ক্ষেত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই একেবারে কম পারিশ্রমিকে কাজ না করাই ভালো। তবে আপনি যদি নতুন শুরু করেন, তা হলে প্রথমদিকে পোর্টফোলিও মজবুত করার জন্য পারিশ্রমিক কিছুটা কমিয়ে দেখাতে পারেন। তবে বেশিদিন নিজের প্রতিভার সঙ্গে আপোস করবেন না।
আয়-ব্যয়ের হিসেব রাখুন। স্থায়ী মাসমাইনের চাকরির মতো ফ্রিলান্সিংয়ে ধরাবাঁধা কোনও রোজগার থাকে না। কোনও মাসে বেশি, কোনও মাসে কম হতে পারে। তাই বড় কোনও খরচ করার আগে আপনার রোজগার আর খরচের স্পষ্ট ছবি বুঝে নিতে হবে। তার জন্য ফ্রিলান্সিং থেকে ছ’মাসের মোট রোজগারের গড় করুন, সেই অঙ্কটাই আপনার প্রতি মাসের রোজগার। যাবতীয় খরচের প্ল্যানিং করুন এই অঙ্কটা মাথায় রেখে।