লকডাউন আর আইসোলেশনের নানা সাইড এফেক্ট ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে – দেখা যাচ্ছে, বয়স নির্বিশেষে আমরা সবাই কার্যত ঘরকুনো হয়ে গিয়েছি। বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে যাওয়া বন্ধ এক বছরের বেশি সময়। ঠিক যখন মানুষ বেরোতে আরম্ভ করল, তখনই মাথা চাড়া দিল সেকেন্ড ওয়েভ।
আপাতত কিশোরবয়সি আর বাচ্চারা ফের ঘরবন্দি – কারণ তাদের ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত নেই আপাতত। আর পার্কে যাওয়ার ব্যাপারে যাঁরা তাদের প্রধান সহায় ছিলেন, সেই ঠাকুমা-দিদিমা-দাদুরাও যেহেতু রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচতে অন্দরমহলে আশ্রয় নিয়েছেন, তাই উপায়ও নেই কিছু।
বাচ্চাদের স্কুলের ক্লাস এখন অনলাইনেই হচ্ছে, আগামী বেশ কিছুদিন তেমনটাই চলার কথা। যার ফলে ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়া ছেলেদের হাতেও তুলে দিতে হয়েছে স্মার্ট ফোন, তারাও এখন বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আড্ডা মারে, গেম খেলে একসঙ্গে মিলে। যারা ততটা বড়ো নয়, তারাও নানা কার্টুন বা বিশেষভাবে ছোটোদের জন্য তৈরি হওয়া অনুষ্ঠানে আসক্ত।
এই অবস্থা বেশিদিন চলতে দেবেন না, আজই হাল ধরুন। লাগাতার এক জায়গায় বসে থাকলে যে কোনও মানুষেরই ওজন বাড়বে, শিশু বা কিশোর-কিশোরীও তার ব্যতিক্রম নয়। বাড়তি ওজন সবার আগে যে অসুখটা ডেকে নিয়ে আসে, তার নাম ডায়াবেটিস। ২০৫০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিস মহামারীর আকার নেবে – এ কথা তো ডাক্তাররা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন।
সেই সঙ্গে সারাক্ষণ অডিয়ো-ভিসুয়াল মাধ্যমে আটকে থাকলে ড্রাই আইয়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাথায় ব্যথা হতে পারে। মনঃসংযোগের সমস্যা হওয়াও বিচিত্র নয়।
কিশোর-কিশোরীর ক্ষেত্রে অভিভাবক একা কিছু করতে পারবেন না, তাকে বোঝাতে হবে যে টানা বসে থাকলে তার কী কী সমস্যা হতে পারে। পড়াশোনার জন্যেও যেহেতু তাদের অনলাইন থাকতে হয় এখন, তাই খুব কড়া নজরে না রাখলে ফাঁকি মারাটা বুঝতেই পারবেন না। লেখাপড়া ঠিকভাবে করতে হবে, বিশেষ করে লেখার অভ্যেস যেন চলে না যায়। তার পর অন্তত ঘণ্টাখানেক খেলাধুলো করতে হবে। ছাদে স্কিপিং করা বা সাইকেল চালানোর অভ্যেস থাকলেও চলবে।
একেবারে ছোটো বাচ্চার ক্ষেত্রেও আপনাকে বাড়ির ছাদ, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের লন, বাড়ির সামনের রাস্তাটা কাজে লাগাতে হবে। যাঁদের এ সবের কোনওটাই নেই, তাঁরা বাড়ির বারান্দাতেই খুদে সদস্যের সঙ্গে চুটিয়ে খেলাধুলো করুন। এতে তার সঙ্গে সঙ্গে আপনারও ভালো ব্যায়াম হবে।
পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে খাওয়াদাওয়ার দিকেও। যেহেতু এখন নড়াচড়া বেশি হচ্ছে না, তাই হাই ক্যালোরি খাবার বাড়িতে রাখাই বন্ধ করে দিন। চিপস, চানাচুর নয়, তাজা ফল কিনুন বেশি করে। আইসক্রিমের বদলে জল ঝরানো ঘরে পাতা দই আর মধু দিয়ে পিষে নেওয়া স্ট্রবেরি বা আম দিয়ে দেখতে পারেন – খেতে চমৎকার হয়।