এই পৃথিবীতে মোটের উপর দু’ ধরনের ছাত্রছাত্রী হয় – একদল যারা অঙ্ক পারে, আর কিছু মানুষ গোটা জীবন অঙ্কের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারে না। অঙ্ক দিদিমণি বা মাস্টারমশাইকে দেখলেই বুকের ভিতর ধড়াস ধড়াস শব্দটাও ঠেকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে যায়।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনেক সময়েই এই অঙ্কে কাঁচা ব্যাপারটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতেই থাকে। আপনি নিজেও এককালে স্কুলে পড়েছেন, বিলক্ষণ জানেন এ কথা কতটা সত্যি! তাই সন্তানের বেলাতে যদি এই পরিস্থিতি এড়াতে চান, তা হলে গোড়া থেকেই কয়েকটা ব্যাপার মেনে চলুন।
. ছোটো থেকেই বাচ্চার সামনে অঙ্কে আপনি কত খারাপ ছিলেন, কেমন ভয় পেতেন এসব গল্প করবেন না। এই ভীতির অনেকটা ভূতে ভয় পাওয়ার মতো – কেবল সংস্কারের বশেই মাথায় ঢুকে যায়। বরং বাচ্চাকে বলুন যে অঙ্ক না বুঝলে বার বার শিক্ষকের সাহায্য চাইতে। অনেকেই কেবল ভয়ে শিক্ষককে বার বার একই প্রশ্ন করে না।
. অঙ্কে ভয় খাওয়ার ব্যাপারটা অনেকটাই কিন্তু মানসিক। মানতে খারাপ লাগলেও এ কথা খুব সত্যি যে এই ভীতির অনেকটা দায় বর্তায় শিক্ষকের উপর। সব মানুষ সমানভাবে বোঝাতে পারেন না। যাঁরা অঙ্কে ভয় পান, তাঁরা কখনও না কখনও এমন কোনও শিক্ষক পেয়েছেন যিনি প্রাঞ্জলভাবে অঙ্কের পিছনের যুক্তিটা বুঝিয়ে উঠতে পারেননি। সেখান থেকেই শেখায় ফাঁক থেকে গিয়েছে, পরে এই ফাঁকটা বেড়েছে কেবল।
. অঙ্ক বুঝতে না পারলে কষতে ভালো লাগবে না। আর অনুশীলন না করলে কখনওই স্কিল বাড়বে না। তাই যদি দেখেন আপনার ছেলে/ মেয়ে ক্লাস ফাইভে অঙ্কে খারাপ নম্বর পেয়েছে, তা হলে বকাঝকা না করে সামনের ছুটিতে ক্লাস ফোরের বই নিয়ে বসুন। উদাহরণ থেকে আরম্ভ করে সমস্ত অঙ্ক কষান – কোথায় ফাঁক থেকে গিয়েছে বুঝে যাবেন। ক্লাস টেনে এসে যে ত্রিকোণমিতি পারছে না, তার ভিত ক্লাস এইট থেকেই দুর্বল।
. বাচ্চাকে কখনওই বকে, মেরে-ধরে কিছু শেখানো যায় না। কেউই অপমানিত হতে পছন্দ করে না – ছোটো বাচ্চাও নিজেকে বাঁচানোর জন্য অঙ্কের হাত থেকে পালানোর উপায় খুঁজে নেবে। তার চাইতে তাকে পাশে নিয়ে বসিয়ে অঙ্ক কষান। বাচ্চাদের শেখার ক্ষমতা বেশি, একটু লেগে থাকলেই অঙ্কের মজাটা পেয়ে যাবে আপনার সন্তান। সবার শেখার ধরন এক নয়, এটা খেয়াল রাখবেন।
. অঙ্কে যে কাঁচা, উঁচু ক্লাসে কি তার স্কিল উন্নত করা যায়? যায়, তবে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। আগেই বলা হয়েছে, নিচু ক্লাসেই তার শেখায় ভুল ছিল। খুঁজে বের করতে হবে সমস্যা কতদূর গভীর। তার পর সেই বুঝে নিদান বের করতে হবে। আপনি না পারলে পেশাদার প্রশিক্ষকের সাহায্য নিন, ঠিক সমাধান বেরোবে। সন্তানের মন ভাঙবেন না, তাকে বলুন সে পারবে – তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হবে।
বাবা-মা বা শিক্ষক হিসেবে আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে বাচ্চার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক গড়ে তোলা। সে যদি কিছু বুঝতে না পারে, তা হলে যেন আপনার কাছে আসে, অসুবিধেটা খুলে বলে। একবার এই ব্রিজটা তৈরি হয়ে গেলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না।