লকডাউন, স্কুলের পাট মোটামুটি চুকে যাওয়া, বায়না করলেই ন্যুডল বা পাস্তার প্লেট হাতে পাওয়া, খেলার সঙ্গীর অভাব – এসব নানা কারণে আপনার বাড়ির সবচেয়ে খুদে সদস্যটি চূড়ান্ত আনফিট হয়ে যাচ্ছে, তা কি বুঝতে পারছেন? ওজন বাড়ছে, মেজাজ চড়ছে, বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের আশকারায় বাচ্চাদের দুনিয়াটাই বদলে যাচ্ছে দ্রুত – এর পর সামলাতে পারবেন তো?
প্রত্যেক বাবা-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে বাচ্চার শারীরিক আর মানসিক বিকাশ যথাযথ হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখা। স্বাভাবিক অবস্থায় এই দায়ের অনেকটাই স্কুল বহন করে, বাচ্চারা সেখানে খেলাধুলো করে, বিকেলে পাড়ার পার্কে বা ক্যারাটে-সাঁতারের ক্লাসে যায় – খানিক নড়াচড়া হয়ই। এখন অনলাইন স্কুলের দৌলতে মোটামুটি সবই বন্ধ।
ভেবে দেখুন তো, বাচ্চারা কী পরিস্থিতিতে আছে এখন? একদল মা-বাবা ঘাড় গুঁজে বাড়ি থেকে কাজ করে চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, অন্যদল কাজ হারিয়ে নাকাল – পাগলের মতো সংসার চালানোর মতো টাকা রোজগারের উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। তার পর আছে কোভিডের চাপ, যে সব পরিবারে রোগ ঢুকেছে, তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। যাদের এখনও স্পর্শ করেনি, তারা সর্বক্ষণ ভয়ে ভয়ে আছে। এই সব স্ট্রেসের ছাপ পড়ছে বাচ্চার মনের উপর।
একটি শিশু বা কিশোরের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অ্যাকটিভ থাকাটা খুব জরুরি। তা না হলে তার মাসল বা হাড়ের গঠন পূর্ণতা পাবে না। উলটে অতিরিক্ত মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই – বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে তাদের অ্যাকটিভ রাখার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। রোজ ঘণ্টাখানেক বাচ্চার সঙ্গে খেলতে হবে – ছাতে বা বাড়ির লনে যেতে পারলে খুব ভালো হয়, না হলে ঘরের মধ্যেই খানিক ফাঁকা জায়গা বের করে নিন। ছোটাছুটি করুন, কানামাছি/ কিতকিত খেলুন, স্কিপিং করতে পারেন।
একটা বেলুন ফুলিয়ে নিয়ে হ্যান্ডবল বা ভলিবল খেলা যায়। জাম্পিং জ্যাক বা বার্পিসের মতো ব্যায়াম করতে পারেন। ফুটবল খেলতে পারলে তো খুবই ভালো হয়, সারা শরীরের ব্যায়াম হয়ে যাবে। তবে রোজ একই জিনিস করবেন না, রুটিনে বদল আনুন। না হলে শিশুর একঘেয়ে লাগতে আরম্ভ করবে। বয়স অনুযায়ী অ্যাকটিভিটি বাছতে হবে, এমন কিছু করবেন না যাতে আপনার বাচ্চা ইন্টারেস্ট পাচ্ছে না।
. কোনও কাজ করার জন্য বাচ্চাকে মিষ্টি বা খাবার ঘুষ দেবেন না। লেখাপড়া বা হোমওয়ার্ক তাকে সময়ে শেষ করতেই হবে, অনলাইন ক্লাসে নিয়ম মেনে উপস্থিত থাকতেই হবে – এই ব্যাপারগুলো গোড়াতেই পরিষ্কার বুঝিয়ে দিন।
. বাচ্চার সঙ্গে আপনাকেও খেলতে হবে। বিশেষ করে যে সব বাচ্চার খেলাধুলোয় উৎসাহ নেই এবং ভিডিও গেমে বুঁদ হয়েই দিনের অনেকটা সময় কেটে যায়।
. বাড়িতে চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক, চিপস ইত্যাদি রাখবেন না।
. সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া সারুন। বাচ্চা মোবাইল ছাড়া খেতে চায় না বলে তার হাতে ডিভাইস ধরিয়ে দিচ্ছেন আপনি – তার ঘাড়ে দায় চাপাবেন না।
. যখন তখন মুখ চালানোর অভ্যেস থাকা খুব খারাপ – বদলানোর চেষ্টা করুন। আপনাকে দেখে বাচ্চাও তেমনটা করতে শিখবে।