এ কথা মেনে নিতে কোনও বাধা নেই যে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ এখনই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি, সারা দুনিয়া জুড়ে ভয়াবহ সেকেন্ড ওয়েভ আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির বেহাল দশা কবে কাটবে তার কোনও ঠিক নেই, দ্বিতীয়বার লকডাউন হলে শেয়ার বাজারে ধস নামতে পারে। স্থায়ী আমানতে সুদও ক্রমশ কমছে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় কোথায় টাকা রাখা নিরাপদ জানতে চান?
মিউচুয়াল ফান্ড
লম্বা সময়ের সময়ের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। ইকুইটি, ডেট, স্টক, মানি মার্কেটের মতো নানা ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড হয়। মার্কেটে ফান্ডের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে রিটার্ন পাওয়া যায়। রিস্ক আছে, কিন্তু ভালো রিটার্ন পেতে গেলে সেটুকু নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে রিটার্ন মিলবে বেশি, তবে ডেট ফান্ডও ভালো। ফান্ড ম্যানেজারের পরামর্শ নিন, তা না হলে নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে পড়াশোনা করে নিয়ে তবেই লগ্নি করুন।
মনে রাখবেন, মিউচুয়াল ফান্ডও কিন্তু পুরোপুরি রিস্ক-ফ্রি নয়। ইন্টারেস্ট রেট কমে যাওয়ার আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যায়।
ন্যাশনাল পেনশন স্কিম
অবসরের দিকে নজর রেখে দীর্ঘকালীন কোনও ফান্ডে লগ্নি করতে চান? তা হলে ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের উপর ভরসা রাখতে পারেন। পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নিয়ন্ত্রণ করে এই বিশেষ বিনিয়োগ পদ্ধতি। আগে বছরে অন্তত ৬০০০ টাকা জমা রাখার নয়ম ছিল। এখন সেটা কমিয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। আপনার বিনিয়োগ করা অর্থের কতটা বাজারে খাটবে তা আপনিই স্থির করবেন।
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড
পিপিএফে টাকা রাখতে হয় ১৫ বছরের জন্য, তা বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে। ফলে শেষের দিকে অনেকগুলো টাকা জমে যায়। যে টাকাটা জমা রাখছেন, সেই আসলটা নিরাপদে থাকে – ফলে পিপিএফের আবেদন অম্লান। তার চেয়েও বড়ো সুবিধে হচ্ছে, আপনার হাতে যে বছর যেমন টাকা থাকবে, ততটাই বিনিয়োগ করতে পারবেন।
ন্যাশনাল পেনশন স্কিম
যে কোনও বয়সে শুরু করা যায় এই স্কিমে টাকা রাখা, তুলতে পারবেন ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর। অটো আর অ্যাকটিভ, দুই মোডে টাকা রাখা যায়। অটো মোডে আপনার সঞ্চিত টাকা স্বাভাবিক নিয়মেই বাজারে খাটবে, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আপনি ঠিক করে দেবেন কোন খাতে তা বিনিয়োগ করা হবে। সঞ্চিত টাকা যখন তুলবেন, সুদের উপর কর দিতে হবে না। ইচ্ছে করলে মাঝে কিছু টাকা তুলে নিতে পারবেন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বন্ড
আরবিআই বন্ড করমুক্ত নয়, ৭ বছরের জন্য টাকা রাখা যায়, রিটার্নও মোটামুটি ভালোই। তবে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার। টাকা বিনিয়োগের কোনও উর্ধ্বসীমা নেই। চাইলে মাঝে কিছু রিটার্নও পেতে পারেন।
গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড
গোল্ড ইটিএফ সহজেই কেনা ও বিক্রি করে দেওয়া যায় কোম্পানি স্টকের সঙ্গে। কোনও নিরাপদ লোন নেওয়ার সময় এগুলি বন্ধক রাখতে পারেন। কতদিন ধরে রাখবেন বা কবে বিক্রি করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে আপনার।
পোস্ট অফিস মান্থলি ইনকাম স্কিম
মাসে মাসে পোস্ট অফিসে টাকা জমানোর এই পদ্ধতি সহজ ও কার্যকর। সরকার নিয়ন্ত্রিত এই স্কিমে জমানো শুরু করতে পারেন ১৫০০ টাকা দিয়ে। যেদিন থেকে লগ্নি করা শুরু করবেন, তার ৫ বছর পর ম্যাচুরিটি হবে। আকা বা দু-তিনজনের সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। প্রতি মাসে ইন্টারেস্ট হিসেবে কিছু টাকা পাওয়া যেতে পারে।
ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংস
কোনও কোম্পানি যখন বাজারে নতুন আসে, তখন তাড়া স্বল্পমূল্যে নিজেদের শেয়ার বাজারে ছাড়ে। স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড হয়ে গেলে তার দামও বেড়ে যায়। ভেবেচিন্তে টাকা লাগাতে পারলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ভালো লগ্নি, ঝুঁকির মাত্রাও খুব বেশি নয়।