বডি শেমিং করা নিঃসন্দেহে খুব খারাপ কাজ। চেষ্টা করুন কাউকে মুখের উপর ‘ইশ তুই কি মোটা হয়ে গিয়েছিস রে’ বা ‘বাবা, তোর চেহারাটা তো দিন দিন প্যাকাটির মতো হয়ে যাচ্ছে’ গোছের কথা না বলার। কিন্তু পাশাপাশি এটাও জেনে রাখুন যে, মোটা হতে আরম্ভ করলে আপনার শরীর খারাপ হতে আরম্ভ করবেই। তাই স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।
এই যে ছেলে-বুড়ো সবাই দুদ্দাড়িয়ে মোটা হচ্ছে, কেন বলুন তো? এক, হাতের মুঠোয় রাজ্যের সুস্বাদু খাবার এসে গিয়েছে। আর দুই, হাঁটাচলা আজকাল আর কেউ করেন না। বাড়ির দোরগোড়ায় ট্যাক্সি মেলে, অবসর পেলেই টিভি বা ফোনে নাক ডুবিয়ে বসে থাকা যায়, তা হলে ওজন তো বাড়বেই!
সুবিধে হচ্ছে, খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ লাগু করলে এবং হাঁটাচলার পরিমাণ বাড়ালে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই কিন্তু আপনি সুস্থ, সুন্দর চেহারা ফিরে পেতে পারেন। বাড়িতে সাধারণ রান্না করুন, সেটাই খান। রোজ খানিকটা ফল, আনাজ সেদ্ধ রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। পিজা, পাস্তা, বিরিয়ানি, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, রসগোল্লা, কেক এ সব মাঝে মধ্যে এক-আধদিন খেতে পারেন। তার চেয়ে বেশি হলেই বিপদ। আর সব সময়ে পেটে খানিকটা জায়গা রেখে তবেই খাবেন – পেট ঠেসে খাওয়াটা বাজে অভ্যস।
মোটা হলেই হার্টের উপর বাড়তি চাপ পড়বে
আপনার ওজন যত বাড়বে, শরীরের আকার যত বড়ো হবে তত বাড়বে ব্লাড প্রেশার। হার্টকে সারাক্ষণ বেশি কাজ করতে হবে। এর থেকে স্ট্রোকের আশঙ্কা খুব বেড়ে যায়। শরীরে বাড়তি ফ্যাট আছে মানেই ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তার কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক।
বাড়তি ফ্যাটের কারণে লিভার, কিডনিতেও সমস্যা হবে
যে মানুষের বিশাল ভুঁড়ি আছে, তাঁর কিডনি আর লিভারের মতো অঙ্গেও নির্ঘাত ফ্যাটের পরত জমে আছে। তা ছাড়া ওজন বেশি মানেই আপনি প্রয়োজনের চাইতে বেশি খাচ্ছেন, শরীরে টক্সিনও জমছে অনেক বেশি। তা ফিল্টার করতে করতে কিডনি বেচারা হাঁপিয়ে পড়বে। লিভার, গল ব্লাডারও ঠিকমতো কাজ করবে না, ফলে হজম সংক্রান্ত নানা গোলমাল দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক।
ব্লাড সুগারে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না
বাড়তি ওজন আর ব্লাড সুগারের সমস্যা হাত ধরাধরি করে চলে। সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে আপনার চোখের দৃষ্টি কমবে ধীরে ধীরে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও কাজ করবে না আগের মতো।
হাঁটু ও পায়ে নানা সমস্যা শুরু হবে
বাড়তি ওজনের চাপ সবচাইতে বেশি বইতে হয় হাঁটুকে। তাই যত ওজন বাড়বে, তত চাপ পড়বে আপনার হাঁটু, কোমর আর পায়ে। নানা রকম ব্যথা টের পাবেন – সে সব এড়াতে চাইলে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে
ঘাড়-গলায় প্রচুর ফ্যাট জমলে ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে অসুবিধে হয়, নাক ডাকে। স্লিপ অ্যাপনিয়া কিন্তু বড়ো বিপদের কারণ হয়ে ওঠে অনেক সময়ে।
দেখা দেবে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
থাইরয়েড থেকে আরম্ভ করে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন পর্যন্ত সব হরমোনের স্তরেই সমস্যা দেখা দেবে। পিসিওডি, যৌনতায় অনীহা, বন্ধ্যাত্ব ও আরও নানা সমস্যা দেখা দেবে বাড়তি ওজনের পাশাপাশি।
এবার বলুন, এই সমস্ত সমস্যার সঙ্গে সহবাস করবেন, নাকি ওজন কমিয়ে সুস্থভাবে বাঁচার চেষ্টা করবেন?