উত্তরকাশীতে ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন একদল বাঙালি পর্যটক – আচমকা দুর্যোগ ঘনিয়ে আসায় মৃতদেহ হিসেবে ফিরেছেন তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন। আপাতত এই দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সমস্ত সংবাদমাধ্যম – সমস্যা হচ্ছে, এমন খবর প্রায়শই শোনা যায়।
পাহাড়ে চড়া এককালে ছিল হাতে গোনা কিছু মানুষের শখ। ইদানীং বহুজন তা নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় আকর্ষক ছবিও দেওয়া যায়, সেটাও আগ্রহের অন্যতম কারণ বইকী! এই ফাঁদে পা দিলে কিন্তু ভয়ানক বিপদ হতে পারে।
. মনে রাখবেন, দেশে-বিদেশে সর্বত্র পাহাড়ে চড়াটাকে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস মনে করা হয়। যাঁরা ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের সবার এই বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত একেবারে প্রথমেই। আপনার প্রস্তুতি হওয়া উচিত খেলোয়াড়ের মতোই। শারীরিক সক্ষমতার শীর্ষে থাকতে হবে। বিখ্যাত ট্রেকারদের বই পড়া উচিত ধর্মপুস্তক পাঠের নিষ্ঠা নিয়ে – তা আপনাকে মানসিকভাবে শক্তপোক্ত করে তুলবে, বিপদ থেকে বাঁচার উপায় শেখাবে।
. হুট করে ব্যাগ গুছিয়ে স্থানীয় গাইড বা ভ্রমণ সংস্থার ঠিক করে দেওয়া পথ প্রদর্শক নিয়ে পাহাড়ে হাঁটতে বেরিয়ে যাওয়াটা কিন্তু গর্বের বিষয় নয়, আত্মহত্যার শামিল। এভাবে ট্রেকিং হয় না। যাঁরা ফিরে এসে গর্ব করে বলেন যে ‘এই তো, অমুক পাহাড় ঘুরে এলাম রানিং শু পরে, সঙ্গে বাচ্চাও ছিল – কিস্যু হয়নি তো!’ — তাঁদের দয়া করে পাত্তা দেবেন না। ভাগ্য ভালো ছিল তাই কিছু হয়নি। ট্রেকিংয়ে সর্বক্ষণ শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দিতে হয়, বাচ্চা তার সঙ্গে যুঝবে কীভাবে?
. ট্রেকিং যাওয়ার জন্য সঠিক পোশাক, জুতো, জল, খাবার ও অন্য কী কী প্যাক করা উচিত তা প্রপার ট্রেনিং থাকলেই একমাত্র বুঝবেন। পাহাড়ি রাস্তায় নিচে নামার সময়ে পায়ের গ্রিপে সামান্য এদিক-ওদিক হলে প্রাণ সংশয় হতে পারে – এসব ঝুঁকি নিলেই আফসোস করতে হবে। যে অভিযাত্রীরা লামখাগা পাসে গিয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও প্রপার হাই অল্টিচিউড ট্রেকিং গিয়ার ছিল না বলেই জানা যাচ্ছে।
. পাহাড়ে যে কোনও সময়ে আবহাওয়া খারাপ হয়, আটকে থাকতে হয় একটা জায়গায়। সে সময়ে নিজের ও অভিযাত্রী দলের মোটিভেশন ঠিক রাখা ও বিপদ থেকে দূরে থাকার জন্য অভিজ্ঞতা দরকার। ফেসবুকে পাহাড়প্রেমীদের গ্রুপে নাম লিখিয়ে রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ার প্ল্যান যাঁরা করছেন, তাঁরা সাবধান। ট্রেকিংয়ে টিম লিডারের বিচক্ষণতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সদস্যদের না জেনে, না চিনে, একসঙ্গে ট্রেনিং না করে বেরিয়ে পড়বেন না।
. নিজের সুযোগ সুবিধে, অফিস থেকে পাওয়া ছুটি ইত্যাদির কথা না ভেবে যে সময়ে পাহাড়ে যাওয়া সব চাইতে নিরাপদ, সেই সময়ে যান। এ বছর বর্ষা ভারতীয় উপমহাদেশে লম্বা ব্যাটিং চালাচ্ছে, এখনও পুরোপুরি বিদায় হয়নি। তাই এবার পাহাড় আরও বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। তাছাড়া ট্রেকিংয়ের জন্য নিরাপদ সময় কিন্তু বর্ষার আগে, পরে নয়। যে রুটে যাচ্ছেন , সেখানে কোন সময়ে কেমন আবহাওয়া থাকে, পূর্বাভাস কী বলছে, ম্যাপ ইত্যাদি সব খতিয়ে দেখে নিন ভালো করে।
. শারীরিক অসুস্থতা, হার্ট বা ফুসফুসের সামান্যতম সমস্যাকেও অগ্রাহ্য করবেন না। শারীরিক অসুবিধেকে তুচ্ছ করে পাহাড়ের টানে বেরিয়ে পড়া দুই অভিযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল কিছুদিন আগেই – সে খবরও কাগজে পড়েছেন নিশ্চয়ই?
. প্রশাসন ট্রেকিংয়ের জন্য যে সব নিয়মকানুন স্থির করেছে, সেগুলি মেনে চলুন অক্ষরে অক্ষরে। কোথায় যাচ্ছে, কতদিনের জন্য যাচ্ছেন, দলে কতজন আছে সেসব খুঁটিনাটি অবশ্যই জমা করুন স্থানীয় আধিকারিকদের কাছে।