অফিস যাওয়ার বদলে বাড়ি থেকে কাজ করা যখন শুরু হল, তখন অনেকেরই মনে হয়েছিল যে শাপে বর হয়েছে। এতদিন অফিস যাওয়া-আসা, রাস্তায় জ্যাম, অবরোধ ঠেলতে গিয়ে অনেকটা সময় ব্যয় হত – এবার বাড়িতে থেকে কাজ করে নিজেকে অনেক বেশি সময় দেওয়া যাবে।
কার্যত দেখা গেল যে অফিস আর বাড়ির ফারাকটাই ঘুচে গিয়েছে! যখন-তখন মেল আসছে, লগ ইন করারও নির্দিষ্ট সময় নেই। কাজের গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে, সারা দিন লড়ার পরেও মনে হচ্ছে কিছুতেই নিজের সেরাটা দেওয়া হচ্ছে না!
আপনি একা নন এবং এই মুহূর্তে এ দেশেরই শুধু না, গোটা দুনিয়ার বহু কর্মীই এই মানসিক দোটানার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। মনোবিদদের বক্তব্য, এমন হতেই পারে, কারণ ঘর আর বাইরের দূরত্ব যে এমন আচমকা ঘুচে যাবে সেটা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি।
বাড়িতে থেকে কাজ করার আরও একটা বড়ো সমস্যা হল যে বার বার আপনাকে হয়তো কাছের মানুষদের প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব নিতে হবে। শিশু মা-বাবার মনোযোগ চাইবে, বয়স্করা হয়তো অভ্যেসবশেই কোনও কাজ করে দিতে বলবেন। তাই কাজের সময়টাও লম্বা হবে।
এই পরিস্থিতিতে একটু অসহায় লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু চটপট ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তাও আছে। প্রথমেই মেনে নিন, এটাই ‘নিউ নরমাল’। দিনের পর দিন আপনাকে যদি রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লায়েন্ট কল অ্যাটেন্ড করতে হয়, তা হলে বিশ্রামের ফাঁকফোকরটাও খুঁজে বের করে নিতে হবে।
আগে আমাদের ধারণা ছিল, সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত কাজের সময়। এখন আর সেটা নেই, তাই তো? কিন্তু বদলে যাওয়া সময়েরও একটা প্যাটার্ন থাকে – সেইটা আপনাকেই বের করতে হবে। যখন চাপ কম থাকবে, তখন খানিকক্ষণ সময় নিজের মতো কাটান।
সম্ভব হলে নিজের জন্য একটা সীমারেখা তৈরি করুন। অফিসের সবাইকে সরাসরি না বলতে পারলেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিন যে রাত আটটার পর আপনাকে পাওয়া যায় না, কারণ আপনি তখন ব্যায়াম করেন বা বাচ্চাকে পড়ান। কিছুদিনের মধ্যেই সবাই আপনাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে দেবেন।
আপনার হাতে কী কী কাজ আছে, তার একটা লিস্ট বানিয়ে রাখুন আগের রাতে। কোন কাজগুলো আগে জমা দিতে হবে, কোনগুলো একটু সময় নিয়ে করা দরকার, সে হিসেবটা দিনের শুরুতেই করা থাকলে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে পারবেন।
কাজের ফাঁকে অনেকেরই একটু গেম খেলা, একটু সোশাল মিডিয়া দেখার অভ্যেস থাকে। হালকা ব্রেক নিতে একটু আধটু এ সব করতেই পারেন, কিন্তু এটাই যেন নিয়ম হয়ে না যায়! ওয়ার্কিং আওয়ারের মধ্যে ১৫ মিনিটের বেশি সোশাল মিডিয়া বা গেমের পিছনে নষ্ট করবেন না।