মাথার উপর এক ফালি ছাদের মালিকানা সুনিশ্চিত করতে চান না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর বাড়ি করার বিলাসিতা বাঙালি আজকাল ভুলেই গিয়েছে… দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারে কেবল ফ্ল্যাট। ইদানীং প্যান্ডেমিকের কারণে রিয়েল এস্টেটের বাজার মন্দা, তৈরি হয়ে পড়ে থাকা ফ্ল্যাটের খদ্দের জুটছে না। কিন্তু ঠিক সেই কারণেই আবার খানিক কম দামে হলেও বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রোমোটার – তেমনটাও দেখা যাচ্ছে।
ফ্ল্যাটবাড়ি কিনতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। তা ছাড়াও নানা ছোটোখাটো বিষয়ে খদ্দেরকে ঠকানো হয়। বুকিংয়ের টাকা দেওয়ার পরেও দীর্ঘদিন বাড়ির মালিকানা হাতে পাননি, এমনটাও দেখা যায়। তাই কেনার আগে খুব সতর্কভাবে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আগে ঠিক করুন, ফ্ল্যাট কেনার খাতে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ করতে পারবেন এবং টাকার জোগান কোথা থেকে আসবে। যদি বেশি টাকা ডাউন পেমেন্ট করতে পারেন, তা হলে লোনের চাপ কম হবে। ঠিক কত টাকা মাসিক লোনের চাপ নিতে পারবেন, সেই হিসেবটাও কষে নিতে হবে। তার পরেই ঠিক করতে হবে কোথায় এবং কত বড়ো ফ্ল্যাট কিনবেন। শহরের মধ্যে হলে এক দাম হবে, একটু দূরে হলে আর এক। বাড়ির সবার সুবিধে-অসুবিধে, যাতায়াতের সুবিধে ইত্যাদি দেখে নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।
চাকরির বাজার টালমাটাল, ব্যবসার হাল খারাপ। তাই ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন। যদি লোনের কিস্তি শোধ করতে না পারেন, তা হলে কিন্তু ফ্ল্যাট স্বপ্নই থেকে যাবে। ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা যেদিন থেকে মাথায় ঘুরবে, সেদিন থেকেই টাকা সরিয়ে রাখা শুরু করতে হবে। তা হলেই ব্যাঙ্ক লোনের বোঝা বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে না, ডাউন পেমেন্ট বাবদ কিছু টাকাও জমে যাবে। অনেকে অবশ্য কোনও প্রপার্ট বিক্রি করার পর সেই টাকা দিয়েও ফ্ল্যাট কেনেন, তবে সব ক্ষেত্রেই কিছু টাকা লোন নিতে হয়।
কোন ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেবেন, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন। দেখে নিন কোথায় সুদের হার কেমন। আপনার ক্রেডিট স্কোর ভালো হলে, অর্থাৎ আগে সময়ে ঋণ পরিশোধের রেকর্ড থাকলে লোন পেতে সুবিধে হবে। আবার যাঁরা নানা খাতে লোন করে রেখেছেন ইতিমধ্যে, তাঁদের আবেদন বাতিলের আশঙ্কা আছে। কোন ব্যাঙ্ক কী হারে লোন দিচ্ছে খতিয়ে দেখে নিন। নানা বিমা সংস্থা বিমার বিনিময়ে লোন দেয়, সেই সব অপশনও দেখতে পারেন। যে কোনও অবস্থাতেই লোনের চাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
ফ্ল্যাট বাছাইয়ের সময় কার্পেট এরিয়া আর সুপার বিল্ট এরিয়ার ফারাকটা ভালো করে বুঝে নিতে হবে। কার্পেট এরিয়া মানে আপনার ফ্ল্যাটের ভিতরটাকে বোঝায়, সুপার বিল্ট-এ ধরা হয় দেওয়ালের প্রস্থ, সিঁড়ি, ঘরের বাইরের লবি ইত্যাদি সব কিছুই। বহু অসাধু ব্যবসায়ী কিন্তু অসতর্ক ক্লায়েন্টকে ঠকিয়ে দেন এই ক্ষেত্রে। আপনাকে পরিষ্কার কথা বলে জেনে নিতে হবে, ঘরের ভিতরে ঠিক কতটা জায়গা পাচ্ছেন।
আপনাকে একেবারে প্রথমেই দেখতে হবে বিল্ডারের কাছে একেবারে জটিলতামুক্ত টাইটেল ডিড আছে কিনা। টাইটেল ডিড ঠিক থাকা মানে বিল্ডারের প্রপার্টির উপর আইনি অধিকার আছে। এইখানে কোনও সমস্যা থাকলে কিন্তু পরবর্তীকালে আপনি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়বেন। এবার দেখুন স্থানীয় পৌরসভা, ইলেকট্রিসিটি বোর্ড, ওয়াটার সাপ্লাই, সুয়ারেজ বোর্ড, ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছ থেকে পাওয়া নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আছে কিনা প্রোমোটারের কাছে। বিল্ডিং অ্যাপ্রুভাল প্ল্যান থাকাও জরুরি।
এবার খোঁজ করুন এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট আছে কিনা। এনকামব্রেন্স থাকা মানে যে জমিতে বাড়িটি তৈরি হয়েছে, তার উপর কোনও মর্টগেজ নেই। দেখে নিন সমস্ত প্রপার্টি ট্যাক্স দেওয়া আছে কিনা। আন্ডার কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কমেন্সমেন্ট সার্টিফিকেট দেখে নিতে হবে। তৈরি হয়ে যাওয়া বাড়ির ক্ষেত্রে দেখতে চান কমপ্লিশন সার্টিফিকেট।