বাচ্চা স্কুলে যেতে চাইছে না, হাতের লেখা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, হোমওয়ার্ক করছে না ঠিক করে? এমন অভিযোগ অনেক মা-বাবাই করেন, তবে কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে সমস্যাটা সত্যিই মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এই সব ক্ষেত্রে বাচ্চাকে জোরাজুরি করেও লাভ হয় না – সে মোটেই কারও কথা শুনতে চায় না, দিন দিন আরও বেয়াড়া হয়ে ওঠে।
. যদি মনে হয় যে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা হলে মাথা ঠান্ডা করে একটু ভাবুন। বাচ্চাকে মেরে-বকে, বোর্ডিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বা সত্যিই পাঠিয়ে খুব একটা লাভ হবে না, পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে। তার চেয়ে একটু ধৈর্য নিয়ে সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। খুব ভালো হয় যদি একবার পিডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন – আপনার সন্তানের কোনও লার্নিং ডিফিকাল্টি থাকলে তিনিই মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলতে পারেন।
. এই পর্যন্ত পড়েই অনেক অভিভাবক মুখ ফিরিয়ে নেবেন – ভাববেন, আজকাল কথায় কথায় মনোবিদের সাহায্য নেওয়াটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে! বাচ্চা দুষ্টুমি করছে, সেখানে মনোবিদ কী করবেন? ব্যাপারটা অত সরল নয়। বাচ্চারা বড়োদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়, এ কথা সত্যি। তাই বলে বড়োদের হাতে মার-বকুনি খেতে ভালোবাসে না তারা। লাগাতার বদমাইশি করে সে নিজে কেন সবার ভালোবাসা হারাবে বলুন তো?
. মানুষের মস্তিষ্ক এক অতি জটিল বস্তু, আপনার আমার চেনা-জানা হিসেবের বাইরেও অনেক কিছু হয়। নানা ধরনের ওয়্যারিং থাকে ব্রেনের, তার ফলে কারও আইকিউ মারাত্মক বেশি হয়, কারও কম। কেউ দেশ-বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে অনেক কিছু জানে কিন্তু সাধারণ অঙ্ক বুঝতে পারে না। কারও মনঃসংযোগের ক্ষমতা অসীম, কেউ ১০ মিনিটের বেশি একটা কাজে ফোকাস করতে পারে না। কেউ লোকজনের সঙ্গে সহজে মিশে যায়, কারও কথা বলতেই ভালো লাগে না। আপনার বাচ্চার এই ধরনের কোনও সমস্যা থাকলেও তার প্রভাব পড়বে লেখাপড়ায় – তাই গোড়াতেই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো। তার পর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে তাকে গাইড করতে হবে।
. বাচ্চার জীবনে কিছু ডিসিপ্লিন থাকা জরুরি। সে যেন ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠে, খানিক খেলাধুলো করে রোজ। সাইকেল চালালেও চলবে। বেশি জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যেস তৈরি করবেন না। রোজ ফল খাওয়াও একান্ত জরুরি। সারাক্ষণ হাতে মোবাইল দেবেন না, বেশি টিভি দেখার উপরেও নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত।
. সমস্যা যাই হোক না কেন, সব বাচ্চাকেই বেসিক লেখাপড়া করানো যায় – স্রেফ এই কথাটা খেয়াল রাখবেন। হয়তো তার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হবে আপনাকে, কিন্তু কাজটা করা সম্ভব।