অতিমারি পর্বে কাজ খুইয়েছেন বহু মানুষ, অনেকেরই মাইনে কমে গিয়েছে। হাতে টাকার জোগান কম গোটা পৃথিবীর মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর। এই পরিস্থিতিটা কেটে যাবে অদূর ভবিষ্যতে, কিন্তু তত দিন নিজেকে টিকিয়ে রাখতে গেলে আপনাকে এখন থেকেই মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম।
১. হাতে খরচ চালানোর মতো কিছু ক্যাশের জোগান আছে তো?
যা রোজগার, তার অন্তত ৪০% সঞ্চয় করে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞেরা। তাতে কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি সামলানো সহজ হয়। যাঁরা কিছু টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছেন এবং দরকার পড়লে তা ভাঙিয়ে কিছুদিন চালাতে পারবেন, তাঁরা অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে ভালো থাকবেন। যাঁদের ক্ষেত্রে আয় আর ব্যয়ের সামঞ্জস্য ছিল না, তাঁরা মুশকিলে পড়বেন। ফুল অ্যান্ড ফাইনাল সেটলমেন্ট বাবদ পাওয়া টাকা এবং পিএফে যা জমেছে সেটা তুলে নিন। তার পর এই ফান্ড থেকে কীভাবে খরচ করবেন, তা ভাবতে হবে। চাকরি জীবনের একেবারে শুরু থেকেই কিছু লিকুইড ক্যাশের জোগান রাখা ভালো।
২. বাজেট বানান, তা মেনে চলুন
হাতে টাকা কম মানে আপনাকে প্রতিটি পা মেপে ফেলতে হবে। পরের চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট বাজেট তৈরি করে নিন। তার মধ্যে বাচ্চার স্কুলের মাইনে, মেডিকাল ইনশিওরেন্স, জীবন বিমা পলিসির মতো অত্যাবশ্যক খরচগুলি তার মধ্যেই ধরতে হবে। বাজেটের বাইরে গেলে একেবারেই চলবে না। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটি, মদ্যপান, ধূমপান, বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করা চলবে না।
৩. কোন সম্পত্তি বা সঞ্চয় ভেঙে টাকার জোগাড় করা উচিত, তা জানেন তো?
হাতে টাকা লাগবে বলে যে কোনও সঞ্চয় ভেঙে ফেলবেন না। আপনার যাবতীয় ‘অ্যাসেট’ বা সম্পত্তি হাতের কাছে রাখুন, তার পর অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিয়ে তার বিনিময়ে ক্যাশ ফ্লো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সোনা, বাড়ি, গাড়ি, ইনশিওরেন্স পলিসি, পিএফ-এ জমা রাশি সব কিছুই অ্যাসেট। যেগুলির বিনিময়ে তাড়াতাড়ি টাকা পাওয়া সম্ভব, সেগুলিকে আগে লিকুইডেট করুন। ইনশিওরেন্স ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেবেন না, সেটা বোকামি। তার বিনিময়ে লোন নিতে পারেন।
৪. পারসোনাল লোন নেবেন না
অ্যাসেটের বিনিময়ে লোন নিতে গায়ে লাগে, কিন্তু সেটা অনেক নিরাপদ। পারসোনাল লোনের চক্করে পড়লে কিন্তু বিপদ বাড়বে। আজকাল নিমেষের মধ্যে অ্যাপ ডাউনলোড করেই লোন মিলে যাচ্ছে, কিন্তু তা শুধতে গিয়ে প্রাণান্তকর অবস্থা হবে। সেই সম্পত্তিতেই হাত পড়বে – তার চাইতে সোনার গয়না থাকলে বিক্রি করে টাকার জোগাড় করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
৫. চড়া সুদের লোভে অচেনা ব্যাঙ্কে টাকা রাখবেন না
এ দুনিয়ায় বিনামূল্যে কিছুই মেলে না। তাই কোনও ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থা বা ব্যাঙ্কে ভালো সুদ মিলছে বলেই সেখানে লগ্নি করতে যাবেন না। বহু ব্যাঙ্ক লিকুইডেট করেছে আর্থিক সঙ্কট চলাকালীন – গোটা বিশ্বের ইতিহাসের দিকে তাকালেই তা জানতে পারবেন। তাই সাবধানে ব্যাঙ্ক বেছে নিন। সম্ভব হলে কোনও ব্যাঙ্কেই সুদসহ নগদ জমা রাশির পরিমাণ ৫ লক্ষের বেশি রাখা উচিত নয় – কারণ ব্যাঙ্ক ফেল করলে ওই পরিমাণ টাকাই ডিপোজিট ইনশিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন ফেরত দেয় গ্রাহককে। এমন ব্যাঙ্ক বাছুন যা স্থিতিশীল, এনপিএ বা নন পারফর্মিং অ্যাসেটের পরিমাণ কম।