কিছুদিন আগে পর্যন্ত ইউটিউব কেবলমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই পরিচিত ছিল। গান শুনতে, সিনেমা দেখতে বা নতুন কোনও কনটেন্ট আপলোড করতে হলে ইউটিউব ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যাবহারিক দিক থেকে সহজ মাধ্যম।
তার পর ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হল, তত বিনোদন সম্পর্কে মানুষের ধারণাও বদলাতে আরম্ভ করল। উঠে এল নতুন নতুন ফর্ম। কেবল ফিচার ফিল্ম নয়, শর্ট ফিল্মও চিন্তার খোরাক জোগাতে পারে, তা প্রমাণিত হল। আরও নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি হতে আরম্ভ করল ওয়েব জুড়ে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে উঠলেন তরুণ প্রতিভারা।
একটা সময়ে দেখা গেল যে, মেকআপ টিউটোরিয়াল, গেমিং, রান্নাবান্না, সিনেমা বা গানের সমালোচনা, রান্নাবান্না, ভিডিও গেম খেলা, প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন সংক্রান্ত ভিডিও ক্রমশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে। মোদ্দা কথা, এক কালে যে ধরনের বিষয় নিয়ে ম্যাগাজিনে লেখা হত, সেটাই ভিডিও হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে আরম্ভ করল ইউটিউবে।
যাঁরা ভালো কনটেন্ট বা চিন্তার খোরাক জোগান, তাঁদের ভক্তসংখ্যাও প্রচুর। আর এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সামনে নিজেদের প্রচার করতে এগিয়ে আসেন নানা ক্ষেত্রের উৎপাদকেরা। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক অনুগামী তৈরি হলে ইউটিউব পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তা ছাড়া ভিডিওর মধ্যে পণ্যের বিজ্ঞাপন করেও রোজগার করা যায়।
যাঁরা নিয়মিত ভিডিও ব্লগ বা ভ্লগ করেন এবং সাবস্ক্রাইবার বেশি, তাঁদের চ্যানেলে বিজ্ঞাপনও বেশি আসে। Google AdSense নামক একটি প্রোগ্রাম আছে, তার মাপকাঠি পূরণ করতে পারলে তবেই কোনও কনটেন্ট ক্রিয়েটার ইউটিউব থেকে নিয়মিত রোজগার করতে আরম্ভ করেন। অ্যাডসেন্স কোন কনটেন্টকে টাকা পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করবে, সেটা একেবারেই তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত – আপনাকে খুব ভালো করে তাদের নিয়মকানুন পড়ে দেখতে হবে।
কোনও ইউটিউবার কত টাকা রোজগার করবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে তিনি কত বিজ্ঞাপন পাচ্ছেন তার উপর। বিজ্ঞাপন যদি দর্শক ক্লিক করেন এবং পুরোটা দেখেন, তবেই কনটেন্ট নির্মাতার লাভ। কে কত বেশি লাইক পাচ্ছেন বা শেয়ার হচ্ছেন – তার উপর কিন্তু রোজগার নির্ভর করে না।
লাইক বা ভিউয়ের উপর কোনও পেমেন্ট হয় না, দর্শক অ্যাড স্কিপ করে গেলেও কনটেন্ট নির্মাতার কোনও লাভ নেই। ধরুন খুব সফল কোনও কনটেন্ট নির্মাতার বহু সাবস্ক্রাইবার প্রকৃতিগতভাবেই বিজ্ঞাপন দেখলে স্কিপ করেন, তাঁর রোজগার কিন্তু বাড়বে না। আবার যাঁর ভক্তের সংখ্যা কম, কিন্তু সবাই বিজ্ঞাপন দেখতে পছন্দ করেন, তাঁর উপার্জন বেশি হবে। আজকাল তো বলিউডের তারকারাও ছবির প্রচারপর্বে খ্যাতনামা ইউটিউবারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন।
ভারতসেরা কয়েকজন ইউটিউবারের নাম জানতে চান? ‘ক্যারি মিনাটি’, যাঁর আসল নাম অজেয় নাগর ও সাবস্ক্রাইবার ২৯.২ মিলিয়ন থাকবেন তালিকার শীর্ষে। আশিস চঞ্চলানি, আমিত ভাদানা, ভুবন বাম – সবারই সাবস্ক্রাইবার ২০ মিলিয়নের উপর। হর্ষ বেনিওয়াল আর ‘মোস্টলি সেন’ বলে পরিচিত প্রাজকতা কোলির সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কম, প্রায় ১৩ মিলিয়নের কাছাকাছি, কিন্তু এঁরা ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। বিশেষ করে প্রাজকতা তো ওয়েব সিরিজ এবং বলিউড দু’জায়গাতেই পরিচিত মুখ।
বাংলায় সবচেয়ে চেনা ইউটিউবার হলেন ‘দ্য বং গাই’ কিরণ দত্ত (সাবস্ক্রাইবার ৩.২৭ মিলিয়ন), আছেন ‘ওয়ান্ডারমুন্না’ (৮৭১ হাজার) ইন্দ্রাণী বিশ্বাস, ডিডি ইলেকট্রোটেক (১.৪ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার)। এঁরা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা রকম ভিডিও তৈরি করেন, প্রত্যেকের নিজস্ব মার্কেট আছে।
আপনার মাথায় মৌলিক চিন্তাভাবনা থাকলে আপনিও নেমে পড়তে পারেন নিশ্চিন্তে। তবে রাতারাতি ফল পাওয়ার আশা করলে হতাশ হবেন। লাগাতার ভালো ভিডিও বানানো জরুরি।