একটা জীবাণু আমাদের ঘরবন্দি করতে পেরেছে, কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহকে থামিয়ে দিতে পারেনি। যাঁরা সন্তানধারণের পরিকল্পনা শিকেয় তুলে রেখে দিয়েছিলেন, তাঁদের আর্থিক দুশ্চিন্তা না থাকলে এই অখণ্ড অবসরে পরিবারে নতুন সদস্য আনার কথা ভেবে দেখতে পারেন কিন্তু!
অনুষ্কা শর্মা, করিনা কাপুরের মতো সেলেব্রিটিদের দেখলেই বুঝতে পারবেন, কাছাকাছি থাকার এই সময়টা কী সুন্দরভাবে উপভোগ করছেন তাঁরা, নতুন অতিথিকে আগমন জানাতে শরীর ও মনকে প্রস্তুত করছেন একসঙ্গে।
তবে হ্যাঁ, কিছু সাবধানতা অতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে, কারণ গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তার কী প্রভাব গর্ভস্থ সন্তানের উপর পড়বে তা নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব নয়।
সদ্যোজাত শিশুর জীবনের অনেকটাই মায়ের সঙ্গে কাটে, তাই মা আক্রান্ত হলে তাকে সামলানোর লোক দরকার। খুব ভালো হয় যদি বাড়ির সদস্যরাই পালা করে বাচ্চার দেখাশোনা করতে পারেন।
একান্ত তা সম্ভব না হলে আয়া বা নার্সের সাহায্য নিতে হবে। কিন্তু তাঁদেরও বাড়িতে রেখে দিতে পারলে ভালো হয়। রোজ বাইরে থেকে যাতায়াত করলে কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বাড়বে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীর ও প্রতিরোধক্ষমতা নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়। তবে মাস্ক ব্যবহার করলে ও হাতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলে এই মারণ রোগের থাবা এড়ানো খুব কঠিন নয়।
সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে, সেই সঙ্গে সচেতনভাবে নাকে-মুখে-চোখে হাত দেওয়ার অভ্যেস কাটিয়ে উঠুন। মেনে চলুন আপনার ডাক্তারের উপদেশ।
সিএমআরআই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সমীর কুমার রায় বলছেন, “দেখুন, এ কথা আগেও প্রমাণিত হয়েছে যে, যতই বিপদ থাকুক না কেন, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিপন্ন সময়ে মানুষ অন্য মানুষকে আঁকড়ে ধরতে চায়, বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। তাই যাঁরা আগে একে অপরকে মোটেই সময় দিতে পারতেন না, সেই সব দম্পতিও কাছাকাছি এসেছেন লকডাউনে।” এই মানসিক অবস্থাও সন্তানধারণের পক্ষে অনুকূল।
যে সব মায়েদের বয়স ৩৫-এর বেশি, ওবেসিটি আছে, সুগার-প্রেশার বেশি – তাঁদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বাকিদের খুব চিন্তার কিছু নেই। এখনও পর্যন্ত আমাদের হাতে যা তথ্য এসেছে, তাতে স্তন্যদানেও কোনও সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে না।
নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করবেন। বাইরে থেকে এসে পোশাক পরিবর্তন করতেই হবে, সম্ভব হলে স্নান সেরে তবেই গর্ভবতীর কাছে যাবেন। ওজন খুব বেশি বাড়তে না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ফর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুরের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাগরিকা বসু পরামর্শ দিচ্ছেন, আলাদা করে না ঘাবড়ে সব প্রেগন্যান্ট মহিলাকেই সাধারণ মানুষের জন্য জারি হওয়া নির্দেশিকা মানতে হবে।
বলছেন, “একান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যাবেন না, সর্দি-কাশি হলে সমস্ত সাবধানতা মেনে চলুন। কেউ আক্রান্ত হয়েছেন জানতে পারলে তাঁর থেকে প্রস্তাবিত দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে।
কোনওভাবে আপনি সংক্রমিত হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ভয় পাওয়ার কারণ তেমন নেই, কারণ গর্ভবতীদের ক্ষেত্রেও সংক্রমণ খুব বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায় না সাধারণত। কারও হলেও সাধারণ জ্বর-সর্দির লক্ষণই থাকবে, তবে শ্বাস নিতে সমস্যা হলে ডাক্তারকে জানান।
পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য নিজের একটা রুটিন তৈরি করে নিন। হাতে নখ রাখবেন না, কিছুদিনের জন্য অন্তত অপ্রয়োজনে পার্লার যাওয়া বন্ধ রাখুন। জিম যাওয়ার বদলে বাড়ির ছাতে বা লনে হাঁটুন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। অহেতুক ভয় পাবেন না, জীবন উপভোগ করুন চুটিয়ে। কাছাকাছি থাকার এমন সুযোগ কিন্তু বারবার মিলবে না!
ফোটো সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম