আর পাঁচজন বছর ২৪-এর বাঙালি মেয়ের সঙ্গে তেমন ফারাক নেই সানজিদা ইসলামের। বিয়ের আগে এবং অনুষ্ঠানের দিন যেমন এখনকার সব মেয়েই ফোটোশ্যুট করান, তেমনটাই প্ল্যান করেছিলেন তিনিও। পেশাগতভাবে বাংলাদেশের রংপুরের এই তরুণী প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটার এবং বিয়েও করছেন এক সহ খেলোয়াড় মিম মোসাদ্দেককে। তাই গায়ে হলুদের সকালের ছবির ব্যাকড্রপ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সেই মাঠটিকে, যেখানে রাত-দিন প্র্যাকটিস করেই তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন।
এই পর্যন্ত গল্পে কোনও মোচড় নেই। ফোটোগ্রাফারের টিম, শাড়ি, ফুলের গয়না এবং পুরো মেকআপসহ সানজিদা যখন মাঠে পৌঁছন, তখন সেখানে খেলছেন কচিকাচা ক্রিকেটাররা। মাথায় পোকা নড়ে উঠল ডান হাতি ব্যাটসম্যানের – ব্যাট ধার নিয়ে কয়েকটা বলের মুখোমুখি দাঁড়ানোর লোভ সামলাতে পারলেন না তিনি। ক্যাজুয়াল মুহূর্তের সেই ছবিই ফ্রেমবন্দি করলেন ফোটোগ্রাফার।
সেই ছবিই নিজের ইনস্টা পাতায় মজার ছলে পোস্ট করেন সানজিদা। হু হু করে ভাইরাল হতে আরম্ভ করে ছবিটি। কিছু মানুষ প্রশংসা করলেও বিয়ের দিন এমন কান্ড বাধানোয় দারুণ উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে ট্রোলবাহিনী। এমনকী, সানজিদার শ্বশুরবাড়িতেও ফোন যায় শুভানুধ্যায়ীদের। তবে পরিবারের কারও তাঁর এ কাজে খটকা লাগেনি।
বিয়ের দিন এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে সানজিদা যখন প্রায় বাক্যহারা, তখন মাঠে নামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। তারা সানজিদার ছবি রিপোস্ট করে নিজেদের ইনস্টা অ্যাকাউন্ট থেকে – ক্যাপশনের মর্মার্থ, মহিলা ক্রিকেটারের বিয়ের সাজ তো এমনই হবে! শাড়ি, গয়না পরেই তো তিনি ব্যাট হাঁকড়াবেন!
বাংলাদেশের এক অখ্যাত ক্রিকেটার মুহূর্তে হয়ে ওঠেন মহিলা ক্রিকেটের পোস্টারগার্ল – সারা বিশ্ব থেকে শুভেচ্ছাবার্তা আসতে শুরু করে সানজিদা-মোসাদ্দেকের জন্য। এহেন প্রচারের আলোয় প্রথমদিকে একটু বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন সানজিদা। পরে অবশ্য নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন স্পষ্ট ভাষায়।
বলেছেন, “ছবি তো আমি প্ল্যান করে তুলিনি, জাস্ট হয়ে গিয়েছে ব্যাপারটা। দেখলাম বাচ্চাগুলো খেলছে – তারপর যা হয়, ব্যাটটা চাইলাম একবার। ওরাও বলল, হ্যাঁ আপু নাও। পোজ দিইনি, এমনিই ক্যানডিড ছবি উঠেছে। আর নিন্দে? নাহ, ওসব আর গায়ে লাগে না। বাংলাদেশে একটা মেয়ে যেদিন ক্রিকেটার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিন থেকেই লোক বাড়ি বয়ে এসে কথা শুনিয়ে যায়। আমার পরিবারও তাতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কেউই আলাদা করে মাথা দেয় না ওসবে।”
কেবল বিয়ে হচ্ছে বলেই একটি মেয়ে তার স্বাভাবিক জীবন কাটাতে ভুলে যাবে? এই বস্তাপচা ধারণা থেকে বেরোতে আমাদের আর ঠিক কতদিন সময় লাগবে বলুন তো?
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম