বারাক ওবামা যে ভারী চমৎকার লেখেন, তা নিয়ে তাঁর পাঠকের মনে কোনও সন্দেহ নেই অনেকদিনই। তাঁর প্রথম লেখা ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’ আর দ্বিতীয় বই ‘দি অডাসিটি অফ হোপ’ পড়েই পাঠক বুঝে গিয়েছিলেন যে প্রাক্তন এই আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কলম কোনও পেশাদার লেখকের চেয়ে কম ধারালো নয়। আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড ‘আ প্রমিসড ল্যান্ড’ বেরিয়েছে নভেম্বর মাসে – একেবারে প্রথম থেকেই তা বিকোচ্ছে হইহই করে।
বারাক ওবামার শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত মননের প্রকাশ দেখা যায় তাঁর গদ্যেও। সহজ, তরতরে ভাষা, প্রায় ঔপন্যাসিকের মতো টানটান শৈলী একটুও টাল খায়নি ৭০০ পাতার বইয়ের কোনও প্যারাগ্রাফে। ছোটো ছোটো স্বীকারোক্তি প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেবে তিনি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে কোনও অংশে আলাদা নন। যেমন ধরুন, এই তুমুল ডিজিটাল বিশ্বে দাঁড়িয়েও তিনি রোজের দিনপঞ্জি লিখে রাখেন হলুদ প্যাডের পাতায়, কলম দিয়ে! হ্যাঁ, কলমেই লেখেন বারাক, কারণ তাঁর মনে হয় যে অগোছালো চিন্তাভাবনাকে কম্পিউটার বড়ো সাজিয়ে-গুছিয়ে ঝকঝকে করে দিচ্ছে!
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, যাঁরা ওবামার সমসাময়িক পৃথিবীর ইতিহাস ও সেখানে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ভূমিকা বিষয়ে জানার আগ্রহ নিয়ে বইটির পাতা ওলটানোর প্ল্যান করছেন, তাঁরা একটু হতাশ হতে পারেন। হ্যাঁ, সে সব বিষয় আছে, তবে তার চেয়ে অনেক বেশি করে আছে ব্যক্তি বারাকের কথা। তাঁর ছেলেবেলা, মা, দাদু-দিদিমার কথা, কলেজের দিন, মিশেলের সঙ্গে আলাপ ও বন্ধুত্ব, সংসারের খুঁটিনাটি পড়তে বেশি ভালো লাগে নিঃসন্দেহে!
কী ব্যক্তিজীবন, কী কর্মজীবন – কখনওই খুব বৈপ্লবিক ছিলেন না ওবামা – তাঁর জীবন অনেক ঘরোয়া, গোছানো। সমালোচকেরা এটাকেই তাঁর বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বরাবর, তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিজেকে বদলাননি একটুও। তাঁর নিজের মতো করেই দেশ চালিয়েছেন, আইন প্রণয়ন করেছেন, সমালোচনা সয়েছেন, বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকে আততায়ী নির্বিচারে গুলি চালালে ভয়ানক কষ্ট পেয়েছেন। সাধারণ মানুষের মতোই অজস্র ওঠাপড়া এসেছে তাঁর জীবনেও।
বইয়ের একেবারে শুরুতেই একটা কথা বলেছিলেন বারাক, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকাটাও আসলে আর পাঁচটা চাকরির চেয়ে খুব আলাদা নয়। আমেরিকার সরকার চালানোর পদ্ধতির সঙ্গে কোনও বড়ো কোম্পানি সামলানোর অনেক মিল আছে – মুখবন্ধে বলা এই কথাগুলোই গোটা বইয়ের মুডটা সেট করে দেয়! আপাতত এই বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রতীক্ষায় রয়েছেন পাঠকরা।