লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি তাঁকে। কোভিডের আক্রমণ সামলে সেরেও উঠছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। কুড়ি দিনের অসুস্থতার পর সুরের আকাশে পাড়ি জমালেন বাংলা সঙ্গীতজগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
গত ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুরসম্রাজ্ঞী। তার একদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন তিনি, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সব বিতর্কে দাঁড়ি টেনে চলে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শেষ প্রতিনিধি।
গানবাজনার পরিবারেই জন্মেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। প্রথম গান শিখতে শুরু করেন বাবার কাছে। বারো বছর বয়সে অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ভজন বিভাগে প্রথম হন। পরে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি সহ একাধিক গুণী শিল্পীর শিষ্যা হয়েছিলেন তিনি। ভজন থেকে শুরু করে খেয়াল, ঠুংরি, কীর্তন, গজল, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান পর্যন্ত সঙ্গীতের প্রতিটি ধারায় তিনি ছিলেন সাবলীল।
আধুনিক গান তথা বাংলা সিনেমার গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ নিঃসন্দেহে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বাংলা আর বাঙালির প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে তাঁর কণ্ঠ। দুর্গাপুজো প্যান্ডেলের জৌলুস তাঁর গান ছাড়া ম্যাড়মেড়ে। প্রতিটি রোমান্টিক মুহূর্তেও সঙ্গী তাঁরই গান। উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের লিপে হেমন্ত-সন্ধ্যার জুটি এখনও প্রবাদপ্রতিম। বেশ কিছু হিন্দি ছবির গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন সন্ধ্যা। তবে বম্বেতে থাকেননি তিনি, বাংলা গানের টানে ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল বাংলা সঙ্গীতের এক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। তবে তাঁর কণ্ঠমাধুর্য আর সুরের রেশ অমলিন হয়ে থেকে যাবে প্রতিটি সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে।