বলিউডে আজকাল খুব অন্য ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে। আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যেভাবে ভিন্ন ধারার ছবি মুক্তি পাচ্ছে ও দর্শকের দ্বারা সমাদৃত হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে উৎসাহ পাবেন নির্মাতারা। কারণ ‘শেরনি’ হলে মুক্তি পেলে ক’জন দেখতে যেতেন, তা নিয়ে আমাদের অন্তত সন্দেহ আছে!
তবে আমরা কিন্তু ‘শেরনি’র রিভিউ করতে বসিনি। সত্যি বলতে কী, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, চলচ্চিত্র, গান বা বইয়ের সমালোচনা একেবারেই স্পেশালাইজড কাজ, তার জন্য দীর্ঘদিনের চর্চা লাগে। এই ছবিটি এতটাই ‘রিফ্রেশিং’ যে নিজেদের ভালো লাগাটা ভাগ করে নেওয়ার লোভ সামলানো গেল না!
. এত ‘সবুজ’ ছবি আপনি দীর্ঘদিন দেখেননি। বিশেষ করে যাঁরা জঙ্গল ভালোবাসেন এবং বহুদিন ঘরে আটকা থেকে দম বন্ধ অবস্থা, তাঁদের চমৎকার লাগবে। জঙ্গলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে এও বুঝবেন, কী অসম্ভব সংবেদনশীল ক্যামেরার কাজ করেছেন সিনেমাটোগ্রাফার রাকেশ হরিদাস। বছরের অনেকটা সময় এই ভদ্রলোক জঙ্গলে পড়ে থাকেন, প্রকৃতিই এঁর লেন্সে নায়ক – বলিউডে তেমন পরিচিত মুখ নয়। এখানেও সেভাবেই শুট করেছেন।
. এ ছবির নায়ক একজনই – টি ১২ নামক এক বাঘিনী, তাকে এক ঝলকের বেশি দেখা যায়নি। বিদ্যা বালন আছেন অন্যতম মুখ্য চরিত্রে। নায়িকাকে দেখতে সুন্দর লাগতেই হবে, মুখ্য চরিত্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে — এমন ধারণা নিয়ে আমরা ছবি দেখতে বসি। পরিচালক অমিত মাসুরকর সে সব বস্তাপচা আইডিয়াকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন, তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন বিদ্যা বালন। একবারের জন্যও বিদ্যা নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেননি।
. এ ছবির দুই কাস্টিং ডিরেক্টর রোমিল মোদি আর তেজস ঠক্করের আলাদা অভিনন্দন প্রাপ্য। বিদ্যা বালন, বিজয় রাজ, বিজেন্দ্র কালা, শরত সাক্সেনারা তো ফাটাফাটি অভিনয় করেইছেন, কিন্তু ছোটোখাটো পার্শ্বচরিত্রের জন্য যে সব মানুষগুলিকে এঁরা খুঁজে বের করেছেন তা বাড়তি ডাইমেনশন যোগ করেছে ছবিতে। যাঁরা মধ্যপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্র, ওড়িশার জঙ্গলে অমোঘ আকর্ষণে ছুটে যান বারবার, অভিযাত্রীর চোখ দিয়ে শুষে নেন প্রকৃতিকে, তাঁরা বুঝবেন এ ছবির কাস্টিং ঠিক কতটা বাস্তবানুগ।
. আমরা কেউই নিজেদের কাজ নিয়ে পুরো খুশি হই না কখনও। খতিয়ান নিতে বসলে দেখবেন, জীবনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে গ্লানি আর ব্যর্থতা – সেটাকেই উদযাপন করেছেন কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার আস্থা টিকু। একটা গেমে হেরে গেলে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়ে পালানোর কারণ নেই – জীবন অনেক বড়ো, ছোটো ছোটো সাফল্য আসবেই – সেই আশাতেই এগোতে হবে।
. বিদ্যার জীবনের সঙ্গে আর পাঁচজন চাকরিরতা মেয়ে খুব মিল খুঁজে পাবেন। অফিসে, ব্যক্তিগত জীবনে মেয়ে বলেই তাকে একটা স্টিরিয়োটাইপে ফিট করতে হবে, ধরেই নেওয়া হবে সে ফিল্ডে নেমে বিপজ্জনক মিশন সামলাতে পারে না, সাপোর্টিভ স্বামী তাকে পুরোপুরি বুঝবে না, নিজের গর্ভধারিণীও বার বার সন্তানের জন্য চাপ দেবেন – কিন্তু সে সব সয়েও নিজের লড়াইটা জারি রাখবে।
আর কতদিন যে স্রেফ মেয়ে হওয়ার কারণে এক্সট্রা এফর্ট দিতে হবে, কে জানে?