প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে মহিলাদের প্রতি কোনও বিশেষ পক্ষপাত থেকে আমরা এই লেখা লিখছি না – তার কারণ আমরা সত্যিই বিশ্বাস করি যে প্রত্যেক মানুষেরই কিছু জোরের জায়গা যেমন থাকে, তেমনই থাকে দুর্বলতা। কিছু ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে থাকবেন, কিছু জায়গায় পুরুষ ভালো করবেন। এমন কোনও কাজ সত্যিই নেই, যা বিশেষ লিঙ্গের পক্ষেই করা সম্ভব।
কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, এমনতরো সহজ নিয়মে দুনিয়া চলে না। বিশেষ করে নারীকে দুর্বল বলে ধরে নেওয়াটাই রেওয়াজ, এই বিশ্বাস থেকেই কায়েম হয়েছে পুরুষতন্ত্রের ধারণা। পরবর্তীকালে মেয়েরা যখন ঘরের গণ্ডির বাইরে পা রাখতে আরম্ভ করলেন, তখন ধরেই নেওয়া হল যে তাঁরা পুরুষের কথামতো চলবেন। সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির লড়াইয়ের ইতিহাসটাও দীর্ঘ।
এখনও যে যুদ্ধজয় হয়নি, তা সব মেয়েই জানেন। যাঁরা বাড়িতে থেকে সংসার করেন, তাঁদের বেশিরভাগই নিজের কেরিয়ার না থাকার হীনমন্যতায় ভুগতে আরম্ভ করেন একটা বয়সের পর। কারণ সংসার করাটাকে এখনও সম্মানের চোখে দেখা হয় না, তাঁরা মূলত স্বামীর হাতের পুতুল। যাঁরা কাজে যান, তাঁরাও ‘এরা তো শাড়ি, গয়নার শখ মেটাতে চাকরি করে’ গোছের মন্তব্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন।
তবে চিরদিন কারওই সমানভাবে যায় না, তাই মেয়েরাও বিভেদ বিভাজন ক্রমশ মুছে দিচ্ছেন। স্বীকার করতে বাধা নেই, এখনকার অধিকাংশ পুরুষই মুক্তমনা। তাঁরা নিজেদের কন্যাসন্তানকে বড়ো করার সময়ে পুত্রের সঙ্গে ভেদাভেদ করেননি। তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। বলিউডের দিকেই তাকিয়ে দেখুন একবার – ক্ষমতা ভরকেন্দ্রের নড়ে যাওয়াটা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।
দীর্ঘদিন বলিউড ছিল প্রবল পুরুষতান্ত্রিক। মূলত হিরোর ঘাড়ে ভর দিয়ে ছবি চলত, ব্যবসা আসত। নায়িকা ছিলেন মূলত শোপিস। মহিলা পরিচালক বা প্রযোজকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। নারীকেন্দ্রিক ছবিও কম তৈরি হত।
কিন্তু গত কয়েক বছরে অবস্থাটা বদলেছে নিঃসন্দেহে। প্রথম সারির নায়িকা তো বটেই, মোটামুটি পরিচিতি পাওয়া অভিনেত্রীরাও প্রোডাকশন হাউস খুলে ফেলছেন। নিজের পছন্দমতো কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছেন, ফলে নানা স্বাদের ছবিও তৈরি হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, কারও সঙ্গেই কারও কোনও বিরোধ নেই – সবাই নিজের মতো করে জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: প্রিয়াঙ্কার প্রোডাকশন হাউসের নাম ‘পার্পল পেবল পিকচার্স’। তাঁর বিজনেস প্ল্যানটাও খুব ইন্টারেস্টিং। ভালো আঞ্চলিক ছবি তৈরিতে আগ্রহ আছে এই প্রযোজনা সংস্থার। একটি বাণিজ্যসফল ভোজপুরি ছবি ও একটি উচ্চ প্রশংসিত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত মারাঠি ছবিও প্রযোজনা করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
অনুষ্কা শর্মা: অনুষ্কা যখন ফিল্ম প্রোডাকশনের ব্যবসা নামেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫! সেই ২০১৩ সাল থেকেই ভাই কর্নেশকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলছেন তিনি। তাঁর প্রযোজিত ছবিগুলি নারীকেন্দ্রিক, একটু ‘ডার্ক’। ‘এনএইচ১০’ , ‘ফিল্লাউরি’, ‘পরি’ পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম, অনুষ্কা নিজেও অভিনয় করেছেন তাতে। ‘পাতাললোক’, ‘বুলবুল’-এর মতো ছক ভাঙা ওয়েব সিরিজ নির্মাণের সাহস দেখিয়েও প্রশংসা পেয়েছেন তিনি।
দীপিকা পাড়ুকোন: দীপিকার প্রোডাকশন হাউসের নাম ‘কা প্রোডাকশনস’। মেঘনা গুলজারের ‘ছপাক’ ছিল তাঁর প্রথম ছবি, দ্বিতীয়টি কিংবদন্তি ক্রিকেটার কপিল দেবের জীবনী ‘৮৩’।
আলিয়া ভাট: আলিয়া এই তালিকায় নতুনতম সংযোজন। তাঁর প্রোডাকশন হাউসের নাম ‘ইটারনাল সানশাইন প্রোডাকশনস’। নানা ধরনের ছবি তৈরি করবেন বলে কথা দিয়েছেন আলিয়া। তবে যাত্রা শুরু করবেন শাহ রুখের সঙ্গে কাজ করে।
এছাড়াও কঙ্গনা রানাউত, রিচা চাড্ডা, চিত্রাঙ্গদা সিং, টুইঙ্কল খান্নাও প্রযোজক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন।