ভেগান খাবার ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশে-বিদেশে। তারই প্রমাণ পাওয়া গেল ফ্রান্সের একটি ভেগান রেস্তোরাঁর তরুণ শেফ মিশেলিন স্টার পাওয়ায় – এই প্রথম কোনও পুরোদস্তুর ভেগান রেস্তোরাঁ এই তকমা পেল। প্রসঙ্গত, ‘ওনা’ নামের সে রেস্তোরাঁর মালকিন ৪১ বছরের ক্লেয়ার ভালি একজন স্বশিক্ষিত শেফ এবং ২০১৬-এ ক্রাউড ফান্ডিং করে শুরু করেছিলেন তাঁর স্বপ্নের প্রজেক্ট।
রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের কাছে গুণমান বিচারের শ্রেষ্ঠ মাপকাঠি হচ্ছে মিশেলিন স্টার – বিশ্বের অধিকাংশ সেরা শেফই তিনটি মিশেলিন স্টারের মালিক। ফ্রান্সের মিশেলিন টায়ার কোম্পানি নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য একটি গাইডবুক তৈরি করেছিল ১৯২৪-২৫ নাগাদ – সেখানে কীভাবে গাড়ির টায়ার বদলাবেন, কোথায় বেড়াতে যাবেন, খাওয়ার জন্য কোথায় থামা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হত। নিজেদের পরিচয় গোপন করে একদল সমালোচক খেয়ে বেড়াতেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়, তাদের ভালো-মন্দ লিখতেন এই বইয়ে। ১৯২৬ থেকে শুরু হয় স্টার দেওয়ার প্রক্রিয়া।
নিরামিষ ভোজন নিয়ে কিছুদিন আগেও যে ইউরোপে তেমন আগ্রহ ছিল না, সে কথা ভালি নিজেই স্বীকার করেছেন। তাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ক্লেয়ার ভেগান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং দেশে ফিরে তাঁর স্বপ্নের প্রজেক্ট, একটি রেস্তোরাঁ খোলার চেষ্টা শুরু করেন। ‘ONA’–র অর্থ ‘Origin Non-Animale’ অর্থাৎ পশুপক্ষীর সঙ্গে সম্পর্কহীন। কোনও ব্যাঙ্ক তাঁকে ঋণ দিতে রাজি হয়নি, যুক্তি ছিল এমন রেস্তোরাঁ-ব্যবসা চালানো মুশকিল। তখনই ক্লেয়ার সোশাল মিডিয়ায় আবেদন করেন এবং জনতার টাকা ও একটি গ্রিন ব্যাঙ্কের ফান্ডিংয়ে বোর্দোতে শুরু করেন ব্যবসা।
এত মানুষ ভেগান হতে চাইছেন কেন?
সারা দুনিয়া জুড়েই নিরামিষ খাবারের পক্ষে সচেতনতা গড়ে উঠছে। ইউরোপ, আমেরিকার বহু জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পটে এখন সারা দুনিয়ার নানা এক্সোটিক খাবারের পাশাপাশি খাঁটি ভেগান খাবারও মেলে। বহু উপভোক্তা এখন তাঁদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে চান, কোনও প্রাণীহত্যার দোষে অভিযুক্ত হতে চান না। ভেগানরা নিরামষভোজীদের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে – তাঁরা চামড়ার প্রডাক্ট, দুধজাত খাবার, মধু বা মুক্তোও ব্যবহার করেন না।
ভেগান খাবার থেকে কি পুরো পুষ্টিগুণ মেলে?
বিরাট কোহলিকে দেখার পরেও কি সন্দেহ আছে? তা ছাড়া ভারতীয় আঞ্চলিক খাবারেও পুরোদস্তুর ভেগান হওয়ার সব উপাদান মজুত আছে! প্রোটিনের জোগান অব্যাহত রাখার জন্য ছোলা, সয়াবিন, রাজমা, টোফু খেতে পারেন। সয়া দুধ থেকে বানানো যায় দই-ও। পুরোদস্তুর ভেগান কেক বানানো সম্ভব – মাখনের বদলে নারকেল তেল আর ডিমের জায়গায় সোয়া বা আমন্ড দুধ ব্যবহার করলেই চলবে। যে কোনও ফল, বাদাম বা সবজি খাওয়ায় কোনও বাধা নেই — তা ব্যবহার করেই নানা এক্সোটিক পদও রেঁধে ফেলা সম্ভব।
ভেগান ডায়েট কি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক?
অনেকেই তেমনটা মনে করেন। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ভেগান ডায়েট হজম করা সহজ, তা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়ায় না। প্রাণিজ ফ্যাট খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়লে ঠিক কী উপকার মেলে তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি অবশ্য। তবে নিরামিষ ভোজনে ফ্যাটের বাড়াবাড়ি না থাকলে তা বেশ স্বাস্থ্যকর। বেশি করে ফল ও সবজি খেলে কিন্তু ওজন সত্যি কমতে পারে।
তা ত্বকের পক্ষে কতটা ভালো?
যাঁরা ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা যদি ভেগান খাবার খান ও সেই সঙ্গে প্রদাহের কারণ নির্মূল করতে পারেন, তা হলে কিন্তু সত্যিই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার কথা।
View this post on Instagram