গরমকালে তো এমনিই ভাতের পাতের শেষে একবাটি দই পেলে মনটা ঠান্ডা হয়ে যায় – তার খাদ্যগুণ নিয়ে কে কবে ভেবেছে? হ্যাঁ, বাঙালি বরাবরই মিষ্টি দইয়ের ভক্ত, তবে এখানে কিন্তু আমরা বাড়িতে পাতা সাধারণ টক দইয়ের কথাই বলছি – দোকান থেকে কেনা লাল দই খেতে ভালো হলেও তার পুষ্টিগুণ নেই!
ভারতীয়দের খাবারে দই বরাবরই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছে। বহুদিন আগেই আমাদের পূর্বপুরুষরা বুঝে গিয়েছিলেন যে প্রোটিনকে সহজপাচ্য করে তুলতে ও তার তন্তুগুলিকে নরম করার জন্য দইয়ের জুড়ি নেই। তাই মাছ-মাংসের ম্যারিনেশন হিসেবে দইয়ের ব্যবহার হয়েছে সুপ্রাচীন কাল থেকে।
ভারী খাবারের শেষে রায়তা পরিবেশিত হয়, তা খাবার হজম করতে কার্যকর। গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়ে খাওয়া হয় দইয়ের ঘোল বা লস্যি, উত্তর-পশ্চিম ভারতে কাড়হি খাওয়ারও চল আছে – কারণ তা খাবার হজম করতে সাহায্য করে, পেট ঠান্ডা রাখে।
১. বুঝতেই পারছেন, দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর অন্ত্র ভালো থাকলে আপনার কোষ্ঠ পরিষ্কার হবে প্রতিদিন – শরীরে বর্জ্য জমা হয়ে থাকবে না। তাতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখাটা সহজ হবে। গরমকালে সেটা খুব জরুরি।
২. বহু মানুষ আছেন যাঁরা দুধ সহ্য করতে পারেন না, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে ভোগেন। দই খেলে তাঁদেরও কোনও সমস্যা হয় না সাধারণত। তা ছাড়া দই থেকে আপনি পাচ্ছেন ক্যালশিয়াম, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে তার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৩. দইয়ের ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া শরীরে ইস্টের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আর যৌন অঙ্গে ইস্ট ইনফেকশনের আশঙ্কা নারী-পুরুষ সবার থাকে। নিয়মিত দই খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
৪. আপনার ত্বক আর চুলের পরিচর্যায় দই একান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তা জানেন? দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের উপরে জমে ওঠা মৃত কোষ সরিয়ে দেয় খুব কোমলভাবে। তাই রোজ স্নানের আগে দই, হলুদ, মধু, লেবু আর আটা দিয়ে প্যাক তৈরি করে সারা গায়ে লাগান, শুকিয়ে গেলে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। মাথার খুশকি তাড়াতে অব্যর্থ নারকেল তেল, দই আর লেবুর প্যাক।
৫. আজকাল শিক্ষিত, শহুরে এবং এক চেয়ারে টানা বসে কাজ করা মানুষের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বাড়ছে। এঁদের ডায়েটেও দই রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, দইয়ের প্রোবায়োটিক, অর্থাৎ জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া লিভারের ফ্যাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে সঙ্গে প্রচুর এক্সারসাইজ করা উচিত, আর ফ্যাটমুক্ত খাবার খেতে হবে।
তবে তাজা দুধ দিয়ে বাড়িতে দই পেতে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। প্যাকেটের দুধ বা দই বিশেষ ভরসাযোগ্য নয় কারণ দুইয়ের মধ্যেই প্রিজারভেটিভ মেশানো হয়।