সবাই শুনেছেন নিশ্চয়ই যে এই অতিমারির মধ্যে শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া একান্ত জরুরি? আর বাঙালির কাছে প্রোটিনের সবচেয়ে সহজ উৎস হচ্ছে ডিম। ব্রেকফাস্টে পাউরুটি দিয়েই হোক বা ফেনা ভাতের উপর পরম যত্নে বসিয়ে দেওয়া ফ্রায়েড এগ – আমাদের তো সবই চলে!
সমস্যা হচ্ছে, এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা দীর্ঘসময় রান্নাঘরে কাটানোর পরেও ডিম রাঁধার সূক্ষ্মতা ঠিক মতো আয়ত্ত্ব করে উঠতে পারেননি, প্রায়ই মন যা চাইছে তা মুখের সামনে আসে না। তাঁদের জন্য আমরা কিছু জরুরি টিপস দিতে পারি।
হাফ বয়েল বা সফট বয়েল: আগুনের তাপে ডিমের সাদাটি সুসিদ্ধ হয়েছে, অথচ কুসুম তখনও নরম ও টুকটুকে লাল – এমন সফট বয়েলড ডিম স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। আঁচ ডিমের মধ্যে থাকা যে কোনও ক্ষতিকারক জীবাণুকে মেরে দেয়, কিন্তু সেই সঙ্গে অটুট রাখে কুসুম থেকে পাওয়া সবটুকু পুষ্টিগুণ। সাধারণত ফুটন্ত নুনজলে মিনিট চার-পাঁচ ডিম ফোটালেই পারফেক্ট হাফ বয়েলড ডিম পাওয়া যায়। তবে নির্ধারিত সময়ের পর গরম জল থেকে তুলে নিয়ে তা বরফঠান্ডা জলে ভিজিয়ে দিন। তা হলে খোসা ছাড়াতে সুবিধে হবে।
পোচ: সনাতন পোচড ডিম কিন্তু তেলবিহীন এবং খুব স্বাস্থ্যকর, তবে তৈরি করা অপেক্ষাকৃত কঠিন। ডিমটা ভেঙে নিন একটি বাটিতে, সামান্য নুন আর গোলমরিচের গুঁড়ো দিন তার উপর, কুসুম যেন আস্ত থাকে। একটা বড়ো জায়গায় জল ফোটান ভিনিগার দিয়ে, তার মধ্যে সাবধানে এই ডিমটা ছেড়ে দিন, ছাড়ার সময় জলটা একবার নেড়ে দেবেন হাতা দিয়ে। সাদা অংশটা কুসুমকে মুড়ে নেবে এবং খুব দ্রুত রান্না হয়ে যাবে, তখন ঝাঁঝরি দিয়ে তুলে জল ঝরিয়ে নিন। প্রথমেই পারফেক্ট পোচ বানাতে পারবেন না, কিন্তু প্র্যাকটিস করতে করতে দক্ষতা এসে যাবে।
আর বাংলায় ডিমের পোচ বলতে যা বোঝায়, তা বিদেশিদের নিয়মে ফ্রায়েড এগ। তাতে মাখন বা তেল লাগে। ছোট্ট বাটিতে করলে সবচেয়ে ভালো হবে। মাখন দিয়ে অল্প আঁচে ডিমটা আলতো করে ছেড়ে দিন। উপর থেকে নুন-গোলমরিচ-চিলি ফ্লেক্স ছড়িয়ে দেবেন। একটা ঢাকা দিয়ে তিন মিনিট রেখে নামিয়ে নিন।
পুরো সেদ্ধ ডিম: মোটামুটি মিনিট আট-দশ নুনজলে ফোটালেই পুরো সেদ্ধ ডিম পাওয়া যায়। সবাই হজম করতে পারবেন। ডিমের স্যালাড, স্যান্ডউইচ বা তরকারিও রেঁধে ফেলা যায় হার্ড বয়েলড ডিম দিয়ে। পুষ্টির দিক থেকেও তেমন ঘাটতি পড়ে না।
ইচ্ছে করলে আপনি স্ক্র্যাম্বল করে, ভেজে বা ডালনা/ অমলেট বানিয়েও ডিম খেতে পারেন। তবে সেটা এক-আধদিনের জন্যই ঠিক আছে। রোজ খাওয়ার জন্য এর কোনওটিই আদর্শ পছন্দ হতে পারে না।
ডিমের কুসুমকে আপনি যত বেশিক্ষণ অক্সিজেন ও তাপের সংস্পর্শে রাখবেন, তত তাড়াতাড়ি কমবে তার কার্যকারিতা। আর হ্যাঁ, যাঁরা কুসুম বাদ দিয়ে স্রেফ সাদাটা খাচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু স্বাদ আর স্বাস্থ্য – দুটো দিকেই কম্প্রোমাইজ় করছেন। পূর্ণ পুষ্টি জোগাতে পারে পুরো ডিমই। কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে রোজ ডিম খাবেন কিনা সেটা ডাক্তারকে একবার জিগ্যেস করে নিন। আর হ্যাঁ, বেশি প্রোটিন খেলেই বেশি বেশি করে জল খাবেন।