এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা খেতে খুব ভালোবাসেন। সারাক্ষণ টুকটাক মুখ চলতেই থাকে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে কোমরের মাপ। টিভি দেখতে দেখতে নিমকি-বিস্কুট, বিকেলের দিকে ভাজাভুজি, কাজের সময় বাদাম, কিশমিশ – চেষ্টা করলেও থামাতে পারেন না এঁদের অনেকেই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সবাই মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের চাপে ভুগছেন।
অল্পবিস্তর স্ট্রেস কিন্তু নেহাত মন্দ নয়, তার কারণে বাড়ে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ। তার প্রভাবেই আপনি ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পাবেন। বা এমন সিদ্ধান্ত নেবেন যা নেওয়ার কথা আগে কখনও ভাবেননি। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে স্ট্রেসফুল পরিস্থিতিতে থাকার অনেক বিপত্তি আছে।
শরীর তখন বেশি বেশি করে কর্টিসল নিঃসরণ করবে, আপনার শরীরে বাড়বে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন। ফলে আপনি ঠিকমতো ঘুমোতে পারবেন না, ক্লান্তি বাড়বে। এটা কিন্তু বাচ্চা, বুড়ো সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।
কর্টিসলের কারণে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে। সেটা সামাল দিতে শরীর আরও বেশি বেশি করে কর্টিসল রিলিজ করতে আরম্ভ করে। ফলে একটা সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়বেই। রক্তে চিনি বেশি থাকা মানেই শরীরে ফ্যাটের পরিমাণও বাড়বে।
এর হাত থেকে বাঁচার একটা রাস্তা হচ্ছে নিয়মিত ব্যায়াম। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, সেটা হচ্ছে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ। রাখা। কিছু কিছু উপাদান এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ তা কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়ায়।
১. চিনি
মধু, গুড় বা চিনি – স্ট্রেস থেকে দূরে থাকতে হলে সব ধরনের মিষ্টির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন। চা কফির মাত্রাও কমাতে হবে, খেলে চিনি ছাড়া পাতলা লিকার খাওয়ার অভ্যেস তৈরি করা উচিত। বাচ্চাদের এমন অভ্যেস থাকলে দুধে চিনি বা এনার্জি ড্রিঙ্ক মেশাবেন না।
চিনি বা মিষ্টি খেলেই ইনফ্লামেশন বাড়বে, তার ফলে বাড়বে কর্টিসল – স্ট্রেসের দুষ্টচক্র থেকে বেরোতেই পারবেন না! কেক, পেস্ট্রি, নরম পানীয়তেও কিন্তু প্রচুর চিনি মেশানো থাকে, সেটা খেয়াল রাখবেন।
২. আর্টিফিশিয়াল সুইটনার
অনেকেই চিনি, মধুর মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি বন্ধ করেই আর্টিফিশিয়াল সুইটনার চালু করে দেন। তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই বেশি, তার কারণ কৃত্রিম মিষ্টি আপনার মেটাবলিজম আরও কমায়। এতে ব্লাড সুগার তো কমেই না, উলটে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেটা বাড়তেই থাকে। অ্যাসপারটেম নামক একটি উপাদানের কারণে নানা শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়।
৩. প্যাকেটজাত কার্বোহাইড্রেট
এর মধ্যে পড়বে পাউরুটি, বিস্কুট, ন্যুডলস, চিপস, চানাচুর, খুব দামি আর পালিশ করা ধবধবে সাদা চাল – সব কিছুই। সমস্যা হচ্ছে, ময়দা বা সাদা ফুরফুরে চালের ভাত দেখতে তো সুন্দর হয়ই, খেতেও খুব ভালো। তার আকর্ষণ কাটানো মুশকিল।
কিন্তু এর মধ্যে পুষ্টিগুণের ছিটেফোঁটাও থাকে না – যে এনার্জি পাওয়া যায়, তাতে লাভের চাইতে ক্ষতির ভাগ বেশি। আর প্যাকেটবন্দি খাবারের আয়ু বাড়াতে বাড়তি চিনি, নুন, প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয়, তার প্রতিটিই বিষতুল্য খারাপ। অতিরিক্ত লবণ শরীরে বাড়তি জল জমিয়ে রাখে।
তাজা রান্না করা খাবার খান, একান্ত তা সম্ভব না হলে ফল আর স্যালাড খান বেশি করে – তাতেও কার্বোহাইড্রেট পাবে শরীর।
৪. ক্যাফেইন আর অ্যালকোহল
ক্লান্তি লাগলেই কি আপনি ধোঁওয়া ওঠা কফির কাপ বা ওয়াইনের গ্লাসের দিকে হাত বাড়ান? ভুল করছেন। শরীরে কর্টিসল বাড়ার পিছনে এ দু’টির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। ক্যাফেইনের গন্ধে একটা চনমনে ভাব আসে শরীরে, এ কথা ঠিক। কিন্তু সেটা একেবারেই সাময়িক।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন অ্যাড্রিনালিন গ্ল্যান্ডের স্বাভাবিক কাজকর্মেও বাধা সৃষ্টি করে। স্ট্রেস বাড়ে অ্যালকোহলের কারণেও। তা ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটায়। আর একটা কথা, মনে রাখবেন কিছু চা, এনার্জি ড্রিঙ্কেও ক্যাফেইন থাকে।
৫. ভাজাভুজি
খুব সচেতনভাবেই ডায়েট থেকে ভাজাভুজি বাদ দেওয়া উচিত। ভাজা খাবার খেলেও কিন্তু আপনার এনার্জির স্তরে ঘাটতি আসে, কাজে মন বসে না – এই সহজ সত্যটা মাথায় রাখবেন!