বাড়ির খাবার কিছুতেই মুখে রোচে না? বাইরে থেকে অর্ডার করে আনা খাবারের কারণেই হয়তো আপনার ব্লাড প্রেশার চড়ছে, ফ্যাট জমছে লিভার আর কিডনির আশপাশে, ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে ক্রশ – সে সব ভেবে দেখেছেন কখনও?
রেস্তোরাঁগুলি ব্যবসা বাড়ানোর খাতিরে খাবার সুস্বাদু করে তুলতে চায় যেন তেন প্রকারে। কারণ ভালো খাবারের টানেই একমাত্র তা খদ্দেরকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর আজকাল তো যেতেও হচ্ছে না, অর্ডার দিলেই খাবার চলে আসছে বাড়িতে। সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানা লাইফস্টাইল ডিজিজ।
বাড়িতে রান্না করার সময় আমরা তেল-মশলার ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করি, কার্বোহাইড্রেটের পাশাপাশি প্রোটিন-রাফেজের বন্দোবস্ত রাখা হয় রোজের ডায়েটে। বাইরে খেতে গেলে কেউই অতশত ভাবেন না – রসনা তৃপ্তিটাই তখন একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে হয়। আর সেই ফাঁকেই শরীরে ঢুকে পড়ে বাড়তি চিনি, নুন, ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ও আরও নানা উপাদন!
১. দেখনদারি বাড়াতে খাবারে মেশানো হয় কৃত্রিম রং
খুব ভালো লাগে লাল টুকটুকে রেড ভেলভেট কেক? বা জাফরানের উজ্জ্বল কমলা টোনে রেঙে ওঠা সন্দেশ? জেনে রাখুন, যে সব রঙিন খাবার কাচের শোকেসের ওপার থেকে আপনার নজর কেড়ে নিচ্ছে, তার অনেকগুলির মধ্যেই আছে কালান্তক রং। খদ্দেরকে আকর্ষণ করতে চাইলে রঙিন খাবারের বিকল্প নেই।
কিন্তু ছোট বা মাঝারি দোকান বিরিয়ানি, রসমালাই বা অন্য কোনও মিষ্টিতে জাফরান দিলে লাভের মুখ দেখবে কী করে? তাই রমরমিয়ে চলে সস্তা রঙের ব্যবহার। সবাই ফুড গ্রেড কালার ব্যবহার করে না, কারণ তার দামও বেশি। তাই পরেরবার রেনবো পেস্ট্রি অর্ডার করার আগে একবার ভেবে নিন।
২. একই তেল বার বার ব্যবহার করা
আপনি যে মুচমুচে ফিশ ফ্রাই, চিকেন পকোড়া বা জিলিপিতে কামড় দিয়ে আরামে চোখ বোজেন, তা ভাজতে প্রচুর তেল লাগে। ডুবো তেলে খাবার ভাজার পর বাড়তি তেলটা ফেলে দেওয়া যায় নাকি? কে না জানে, ভোজ্য তেল কতটা মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে আজকাল!
বড়ো রেস্তোরাঁ এই তেল বাজারে বিক্রি করে দেয় কম দামে – কেনে কারা জানতে চান? ছোটোখাটো ফুড স্টল, মাঝারি রেস্তোরাঁ আর সাব নির্মাতারা। তেল ঠান্ডা হওয়ার পর ফের গরম করে ব্যবহার করলে তার কেমিক্যাল গঠনে কিছু পরিবর্তন আসে। সেটা আপনার শরীরের পক্ষে খুব খারাপ। কিন্তু অত ভাবলে তো আর ব্যবসায়ীর চলবে না! তাই অধিকাংশ ভাজা খাবার তো বটেই, প্যাটিস বা পাইয়ের মতো খাবারেও ট্রান্স ফ্যাট ভরা থাকে।
৩. বাসি খাবারকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য বাড়তি তেল/ চিজ/ ফ্যাট যোগ করা
রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে রোজ ঠিক কেমন বিক্রিবাটা হবে, তা আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। তাই সবাইকেই আন্দাজের উপর ভিত্তি করে খাবারের জোগাড় রাখতে হয়। কোনওদিন খাবার বেঁচে গেলে সেটা ভালো করে ভেজে বা চড়া আঁচে রোস্ট করে রাখা হয়। পরদিন চিজ, মেয়োনিজ বা বাড়তি তেল-মশলা ইত্যাদি মিশিয়ে পুর বা কারি গোছের কিছু একটা বানিয়ে নেওয়াই দস্তুর।
বেশি আঁচে মাছ-মাংস বা সবজি ভাজলে তার স্বাদ ভালো হলেও পুষ্টিগুণ বলে তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকে না। একই খাবার বার বার রান্না করলে বা গরম করলেও তার মধ্যকার তেলে বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে, এর কোনওটাই আপনি বাইরে থেকে দেখে বুঝতে পারবেন না।
৪. প্রিজারভেটিভ বা অ্যাডিটিভের ব্যবহার
টিফিন ক্যারি করেন না, রাস্তায় খিদে পেলে কোনও ফাস্ট ফুড জয়েন্ট থেকে ক্লিং ফিল্মে মুড়ে রাখা বার্গার বা প্যাটি অথবা পেস্ট্রি কিনে খেয়ে ফেলেন? কী মনে হয়, এগুলি অনন্তকাল ভালো থাকতে পারে? খাবারে কোনও জৈবিক ক্রিয়া হওয়া সম্ভব নয়? আদ্যন্ত ভুল ভাবছেন। খাবার বেশিদিন ভালো রাখার জন্য মেশানো হয় প্রিজারভেটিভ। সেই রাসায়নিকের প্রভাবে কিন্তু আপনার শরীরে ইনফ্ল্যামেশনসহ নানা সমস্যা হতে পারে। অনেক চাইনিজ খাবারে মনো-সোডিয়াম গ্লুটামেট মেশানো হয়, তা থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত নুন, চিনি, মশলার দিয়ে রান্না
অতিরিক্ত নুন উচ্চ রক্তচাপের কারণ, বাড়তি চিনি থেকে সুগারের আশঙ্কা বাড়ে। বেশি মশলা খেলে একদিন না একদিন পেটের সমস্যা হবেই! আর জানেন তো, পেট ভালো না থাকলে আপনার হরমোন লেভেলে অজস্র ঝামেলা শুরু হবে? তাই সুস্থ থাকতে বাড়িতে রান্না করা হালকা খাবারের উপরেই ভরসা রাখুন।