যাঁরা খুব হিসেব করে খাওয়াদাওয়া করতে অভ্যস্ত, তাঁদের অনেকের কাছেই গম ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে – এটাই ডায়েটিংয়ের দুনিয়ার সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। তন্বী চিত্রতারকারা প্রায়ই বলেন যে খাদ্যতালিকা থেকে গ্লুটেন পুরোপুরি বাদ দেওয়ার পর থেকে তাঁদের শরীর ভারহীন হয়ে উঠেছে, তাঁরা আগের চেয়ে অনেকটাই ফিট হয়েছেন সর্ব অর্থে৷
শুনতে শুনতে আপনারও নিশ্চয়ই মনে হয়েছে যে গ্লুটেনটা বাদ দিলেই হয়, পাখির মতো হালকা হয়ে ওঠার সেটাই নিশ্চয়ই ম্যাজিক মন্ত্র! কিন্তু আগে জেনে নিন তার আদৌ কোনও প্রয়োজন আছে কিনা৷
গ্লুটেন আসলে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন, যা গম, রাই, বার্লিজাতীয় শস্য থেকে পাওয়া যায়৷ যেমন ধরুন, রুটি, সুজি, দালিয়া, পাস্তা, কেক, পাউরুটি, বিস্কিট, পিজ়া – সবেতেই গ্লুটেন আছে৷ আছে মল্ট আর বার্লিতেও (মানে আপনার চিলড বিয়ারও গ্লুটেন দোষে দুষ্ট!)৷
যাঁদের সিলিয়াক ডিজিজ আছে, তাঁরা গ্লুটেন হজম করতে পারেন না, বাকিদের সাধারণত কোনও সমস্যা হয় না৷ অনেকের গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকে, তাঁদেরও এই প্রোটিন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ এঁরা পাউরুটি-বিস্কিট জাতীয় কিছু খেলেই পেট ফাঁপে, ওজন বাড়ে, অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে, হতে পারে কনস্টিপেশনও।
যেহেতু চট করে এই লক্ষণগুলি দেখেই কেউ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না, তাই বোঝাও যায় না অসুখের অস্তিত্ব৷ তাই গ্লুটেন বাদ দেওয়ার আগে অবশ্যই একবার আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন৷ যাঁদের সিলিয়াক ডিজ়িজ় নেই, তাঁরা যদি কেবল স্রোতে গা ভাসানোর ইচ্ছে নিয়ে আচমকাই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেন, তা হলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে৷
তবে সিলিয়াক ডিজিজ থাকলেও খাওয়াদাওয়ায় তেমন কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, অজস্র গ্লুটেন–ফ্রি অপশন আমাদের রোজের খাদ্যতালিকাতেই আছে৷ যেমন ধরুন চাল, জোয়ার, বাজরা, রাগি৷ ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি বা চাপাটিজাতীয় জিনিসও খাওয়া যায়৷ বিস্কিটের জায়গায় চিড়ে, মুড়ি, কর্নফ্লেক্স খেতে পারেন৷ এখন তো রাগি বা বাজরার পাউরুটিও মেলে৷
বাঙালিদের অনেকেরই কিন্তু সিলিয়াক ডিজিজের সমস্যা থাকে। বহুকালের প্রচলিত একটা প্রবাদ তো আছেই – কথায় কথায় বলা হয় পেটরোগা বাঙালি। তার কারণ হচ্ছে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই আমরা অনেকে গমের খাবার হজম করতে পারি না সহজে।
আর তার সবচেয়ে বড়ো দাওয়াই হচ্ছে সেদ্ধ চালের ভাত আর মাছ! তাই ফ্যাড ডায়েটের চক্করে না পড়ে কব্জি ডুবিয়ে মাছের ঝোল ভাত খান রোজ। ওজন কমাতে চাইলে ভাতের পরিমাণ কমান। মাঝে সাঝে এক-আধদিন লুচি-পরোটা খেলেও চাপ নেই।