আজকাল আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে উঠেছি এবং বুঝে গিয়েছি যে রোজ দই খেলে আমাদের ক্যালশিয়াম আর প্রোটিনের চাহিদার অনেকটাই মিটবে। সেই সঙ্গে ভালো থাকবে পেটের স্বাস্থ্য, কারণ দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যাঁরা দুধ হজম করতে পারেন না, তাঁরা দই খেতে পারেন স্বচ্ছন্দে। তা মাছ বা মাংসে দিয়ে রান্না করলে স্বাদ ভালো হয়, হজম করাও সহজ হয়ে ওঠে।
কিন্তু বাড়িতে পাতা দই ভালো, না দোকানের কেনা দই – তা নিয়ে একটা বিতর্ক আছেই।
দুধ থেকে কীভাবে দই তৈরি হয়? মোটামুটি সবাই জানেন যে হালকা গরম দুধে খানিকটা দই মিশিয়ে রান্নাঘরের গরম কোনও কোণে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিলেই দুধ জমে দই হয়ে যায়। ৪০-৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা দইয়ের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়ার আদর্শ ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ হয়ে ওঠে – তারা সংখ্যায় যত দ্রুত বাড়ে, তত তাড়াতাড়ি দই বসে। কোনও কারণে বেশিক্ষণ রেখে দিলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে, দইও কড়া/ ঝাঁঝালো হয়ে যায়।
তার মানে দাঁড়াচ্ছে, বাড়িতে বসাতে গেলে প্রথমে খানিকটা তৈরি দই লাগবেই – একে দম্বল বা সাজা বলা হয় সাধারণত, ইংরেজি নাম হচ্ছে স্টার্টার। অনেকে বলেন যে দুধের মধ্যে বোঁটাসমেত কাঁচালঙ্কা বা খানিক তেঁতুল মিশিয়ে এক-আধদিন রেখে দিলেও সাজা তৈরি হয়ে যায় – প্রাকৃতিকভাবেই সেখানে জন্মায় ল্যাকটোব্যাসিলাস, সংখ্যায় বাড়তে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ায় তৈরি দইয়ে ঠিক কতটা ব্যাকটেরিয়া আছে বা খাওয়ার সময় তা জীবন্ত অবস্থায় পেটে পৌঁছচ্ছে কিনা তা বোঝা যায় না।
তা ছাড়া বাড়িতে পাতা দই দোকানের দইয়ের মতো অত ঘন, চাপ চাপও হয় না। ভালোভাবে সেট হওয়া দইও কাটলে সবজে আভার জল বেরিয়ে আসে খানিক বাদ থেকেই। ইচ্ছে হলে এই জলটা ঝরিয়ে নিয়েও ঘন দই খাওয়া যায়, তবে জলটা ফেলবেন না। রুটি, পরোটার আটা মাখার সময় বা ঘোল বানানোর সময় এই জলটা ব্যবহার করুন।
দোকান থেকে যে দই কেনা হয় বা ইয়োগার্ট বলে যে ফ্যান্সি বস্তুটি আজকাল বাজারে সুপারহিট, তার সঙ্গে বাড়িতে পাতা দইয়ের মূল পার্থক্য একটা জায়গাতেই – এখানে আগে সেট করা দই ব্যবহার করে ল্যাকটোব্যাসিলাসের প্রজনন করা হয় না। দুধের মধ্যে সরাসরি ল্যাকটোব্যাসিলাস বুলগারি ও স্ট্রেপটোকক্কাস থার্মোফিলাস নামক দুটি বিশেষ স্ট্রেনের ব্যাকট্রেরিয়া মিশিয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে যে মিশ্রণ তৈরি হয়, তার মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া থাকে। ইয়োগার্টের প্যাকেটে লেখা থাকে ঠিক কতটা জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া আপনার পেটে পৌঁছচ্ছে।
তবে এটাও ঠিক, প্যাকেটবন্দি যে কোনও প্রডাক্টেই কিছু না কিছু প্রিজারভেটিভ মেশানো হয়, থাকে রাসায়নিক ফ্লেভার, রং ইত্যাদি। সেদিক থেকে দেখলে বাড়িতে পাতা দইয়ের কোনও বিকল্প নেই। তবে মিষ্টি দই খুব বেশি খাবেন না, তা তৈরিতে অনেকটা চিনি লাগে, ফলে ক্যালোরি কাউন্ট বেড়ে যায়।
. দই পাতার আগে দুধটা ভালো করে ফুটিয়ে নিন, তাতে দই জমবে ভালো।
. ফুল ফ্যাট দুধের দই খেতে সুস্বাদু হয়।