খাবার আমাদের পুষ্টি জোগায়, আর সেই পুষ্টির বলেই নানা রোগ-অসুখ, ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি হয় শরীরে। তাই সাপ্লিমেন্ট বা অন্য ওষুধপত্র নয়, খাদ্যের মাধ্যমে শরীরকে পুষ্টি জোগান দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
চেষ্টা করুন রোজ নয়ম করে অন্তত তিনটি মরশুমি ফল আর দু’টি স্থানীয় সবজি খাওয়ার। লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, নানা শাকপাতাতেই হবে – একগাদা খরচ করে ব্রকোলি বা অ্যাসপারাগাস কেনার দরকার নেই।
শরীরে যেন প্রচুর ফাইবার যায়, সেটা দেখতে হবে। প্রোটিন হিসেবে মাছ, ডিম, মাংস, দুগ্ধজাত উপাদান, ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি খেতে পাবেন। সারা দিনে মোট যা খাচ্ছেন, তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট থাকাও খুব জরুরি।
যদি সম্ভব হয়, তা হলে অরগ্যানিক ফল বা আনাজ কিনুন। আর অতি অবশ্যই বাজার থেকে কেনা জিনিস ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তবেই খাওয়া উচিত।
এবার দেখতে হবে আপনি কোন পদ্ধতিতে রান্না করছেন। রোজের রান্না কম তেল-মশলায় সারার চেষ্টা করুন, ভাপানো রান্নাও খেতে বেশ লাগে। আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মাছ, ইলিশ আর চিংড়িই তো ভাপিয়ে খেতে পছন্দ করি!
ভেটকির পাতুরি যদি ছাঁকা তেলে না ভেজে ভাপিয়ে নেন, তা হলেও ভারী চমৎকার লাগে খেতে। ইন ফ্যাক্ট, যে কোনও গ্রেভিতে কাঁচা মাছ ছেড়ে রান্না করলে তা ভাপানোর পর্যায়েই পড়ে।
আপনার পছন্দের যে কোনও মাছ-মাংস-সবজি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন-গোলমরিচ-লেবুর রস বা আদা-কাঁচালঙ্কা-টক দই ইত্যাদি মাখিয়ে রেখে দিন খানিকক্ষণ।
ম্যারিনেশনে একটি টকজাতীয় উপাদান থাকা আবশ্যক, তা প্রোটিনের তন্তুগুলিকে নরম করে দেবে। তার পর টগবগিয়ে জল ফোটান একটি পাত্রে, অন্য পাত্রে বা কলার পাতায় মুড়ে টিফিনবাক্সে ভরে স্টিম করে নিন আপনার মাছ বা মাংস।
ম্যারিনেট করা সবজি, মাছ বা মাংস আভেনে বা নন-স্টিক ফ্রাই প্যানে গ্রিল করে নিন। খাদ্যবস্তু নিজের আর্দ্রতাতেই সিদ্ধ হবে, একান্ত প্রয়োজন পড়লে সামান্য ফ্যাট যোগ করতে পারেন গ্রিল করার সময়ে।
সেদ্ধ খাবার তো আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকারই অঙ্গ। নানা রকম ডাল সেদ্ধ, বা আলু-গাজর-কড়াইশুঁটি সেদ্ধ সামান্য নুন-মরিচ আর অল্প ঘি বা মাখন দিয়ে খেতে দিব্য উপাদেয় লাগে। স্যুপও মূলত সেদ্ধই। চিকেন বা ডিম সেদ্ধ দিয়ে দারুণ স্বাদু স্যালাড বানিয়ে নেওয়া সম্ভব।
পিছিয়ে থাকবে না সাঁতলানো বা স্টার ফ্রাইও। ছাঁকা তেলে ভাজার চেয়ে নন-স্টিক কড়ায় অল্প তেল ছড়িয়ে চড়া আঁচে ভেজে নেওয়াটাই হচ্ছে স্টার ফ্রাই। স্বাদ বাড়ানোর জন্য পছন্দের সস যোগ করতে পারেন। যে কোনও সবজি, চিকেন বা মাছের স্টার ফ্রাই করা সম্ভব।
রান্নায় খুব ভালো মানের তেল ব্যবহার করা উচিত সব সময়ে। চেষ্টা করুন নন রিফাইন্ড কোল্ড প্রেসড তেল কেনার – আগে ঘানি থেকে যে তেল পাওয়া যেত, তা এই গোত্রেই পড়বে। দাম বেশি পড়লেও স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরনের তেলের কোনও বিকল্প নেই।
অনেকে ভাবেন যে অলিভ অয়েলে রান্না করা বোধহয় সবচেয়ে ভালো – কিন্তু স্থানীয়ভাবে যে তেল মেলে, সেটিই আপনার স্বাস্থ্যরক্ষায় যথেষ্ট। চিনেবাদাম বা সূর্যমুখীর তেলও ব্যবহার করতে পারেন ভাজাভুজি করার জন্য।
চিনি বা মিষ্টি খাওয়ায় রাশ টানুন, আর বাদ দিন প্রসেসড ফুড। দিনে বড়োজোর তিন চাচামচ চিনি খেতে পারেন – তার বেশি হলেই কিন্তু ওজন বাড়বে। যাঁদের বারবার চা খাওয়ার অভ্যেস, তাঁরা চিনি ছাড়া চা খেতে পারলে ভালো হয়।