প্রোটিন আমাদের ডায়েটের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। কারণ আমাদের সর্বাঙ্গীণ শারীরিক সুস্থতার জন্য তা খাওয়া আবশ্যক, তবেই কলাকোষ কার্যক্ষম থাকবে। দেখবেন যাঁরা খুব শরীরচর্চা করেন, তাঁরা ডায়েটে বেশি পরিমাণে প্রোটিন রাখেন। কারণ একটাই, তা শক্তি জোগায়। ব্যায়াম করতে গিয়ে মাসল বা পেশি ক্লান্ত হয়ে যায়, চোট-আঘাত লাগে – বেশি প্রোটিন খেলে শরীর তাড়াতাড়ি সেরে ওঠে।
প্রোটিন তৈরি হয় কীভাবে? একটি প্রোটিন কণা গড়ে ওঠে হাজারো অ্যামিনো অ্যাসিড অণু দিয়ে। এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি পরস্পরের সঙ্গে পেপটাইড বন্ড দিয়ে জুড়ে ল-ম্বা চেন তৈরি করে। জানেন কি, ২০টি আলাদা ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড মিলে একটি প্রোটিন চেন তৈরি হয়?
আমাদের শরীর সুস্থভাবে সমস্ত কাজকর্ম করার জন্য ন’টি অ্যামিনো অ্যাসিড লাগে –এগুলিকে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড বলা হয় এবং এর কোনওটাই আমাদের শরীর নিজের থেকে তৈরি করতে পারে না, খাবারের মাধ্যমেই তা গ্রহণ করতে হয়। একমাত্র কিনওয়া আর সোয়াবিন ছাড়া অন্য কোনও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন এই ন’টি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না।
সমস্ত প্রাণিজ প্রোটিন, অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম, দুধকে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন বলা হয়। যাঁরা দুধ হজম করতে পারেন না, তাঁরা ছানা বা দই খেতে পারেন। প্রোটিন রান্নার সময়ে খানিক ফ্যাট মেশালে খাবারটা খেতে ভালো হয় এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটও শরীরে ঢোকে। যেমন ধরুন, ব্যায়াম করার পর আপনি খুব ভালো মানের খানিকটা মাখনে মুরগি, মাছ বা ডিম রেঁধে খেলেন। সঙ্গে খানিকটা কিনওয়া স্যালাড রইল – তা হলে কিন্তু শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মিটে যাবে।
যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁদের রোজ কোনও না কোনও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিনওয়া এখন এখানেও পাওয়া যায়। যাঁরা ভেগান, অর্থাৎ কোনও প্রাণিজ প্রোটিন খান না, তাঁরা নিয়ম করে কিনওয়া আর সোয়াবিন খেলেই প্রোটিনের অভাবে ভুগবেন না। সোয়াবিন থেকে তৈরি হওয়া টোফু খেতে খানিকটা পনিরের মতোই – খাদ্যতালিকায় সেটাও রাখতে পারেন। ডাল, বাদাম ইত্যাদিও খাওয়া যায়।
ঠিক কতটা প্রোটিন প্রয়োজন হয় আমাদের?
প্রোটিনের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত যা আপনার হাতের মুঠোয় ধরে যায়। পূর্ণবয়স্ক একজন মহিলার আন্দাজ ৪৫ গ্রাম, পুরুষের ক্ষেত্রে ৫৫-৬০ গ্রাম হলেই চলে। একসঙ্গে একাধিক প্রোটিন খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, তাই মাছ, মাংস, ডিম, ছানা বা দই আলাদা আলাদা সময়ে খান। ভাত খেয়ে উঠেই দই না খেয়ে একটু পরে খেলেও চলে।
যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁদের মাসল রিকভারির জন্য হয়তো একটু বেশি প্রোটিনের দরকার হতে পারে – সেটা আপনার ট্রেনার আর পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিন। চিত্রতারকাদের ডায়েট মেনে একগাদা প্রোটিন খাবেন না – সেক্ষেত্রে কিন্তু শরীরে আরও নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে।
প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া কি জরুরি?
না, একেবারেই জরুরি না যদি আপনি সুষম খাবার খান। কিন্তু খাদ্যতালিকায় যদি বিধিনিষেধ থাকে বা আপনার রোজের প্রয়োজন না মেটে, তা হলে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।