আপনার সারা দিনের কাজের সঙ্গী কফির কাপ? ঘুম থেকে ওঠার পর পরই কফির চনমনে গন্ধ ছাড়া কাজকর্ম শুরু করতেই পারেন না? বন্ধুবান্ধবদের আড্ডা বা তর্কের আসরেও ধূমায়িত কফির পেয়ালা ছাড়া একেবারেই চলে না? আর ক্লান্তি লাগলে তো কফি ছাড়া একেবারেই চলবে না!
আপনি একা নন, সারা দুনিয়ার বহু মানুষের ‘রাত কাটে, ভোর হয়’ কফির গন্ধেই৷ পাশাপাশি আবার কফি পানের আদর্শ সময় কোনটা বা কখন কফি খেলে শরীর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে, তা নিয়েও প্রচুর রিসার্চ চলছে৷
এ কথা নিশ্চিত যে কফির মধ্যে যে ক্যাফেইন নামক উৎসেচকটি থাকে, তা শরীর ঝরঝরে করে কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো গবেষণা চালিয়ে, আঁক কষে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, দিনের ঠিক কোন সময়ে আমাদের শরীরের কফির মতো পানীয় প্রয়োজন৷
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের নিজস্ব একটা ঘড়ি আছে, সেটা মেনেই আমরা জীবন কাটাই৷ এই ঘড়িটিই নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা, তার প্রভাবেই আমরা সজাগ থাকি বা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি৷ যখন আমরা ঘুম থেকে উঠি, শরীরে তখন কর্টিসোলের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ তার প্রভাবে জেগে ওঠার খানিকক্ষণের মধ্যে এমনিই ঝরঝরে লাগার কথা, সে সময় শরীরের ক্যাফেইন না পেলেও চলবে৷
দুপুর আর বিকেলের দিকে ফের দু’বার তুঙ্গে ওঠে এই হরমোনের পরিমাণ, তার প্রভাব স্থায়ী হয় ঘণ্টাখানেক৷ (সহজ একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধে হবে৷ যাঁরা আটটায় ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মোটামুটি 8টা-9টা, 12টা-1টা আর 5.30-6.30 হচ্ছে কর্টিসোল তুঙ্গে থাকার সময়৷ মনে রাখবেন, প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে চক্রটা আলাদা হয়, তবে ঘণ্টা চারেক বাদ দিয়ে হরমোনের চক্রটা সক্রিয় হয়৷)
তাই এই সময়গুলো বাদ দিয়ে হাতে তুলে নিন কফির কাপ৷ কর্টিসোল তুঙ্গে থাকার সময়েই যাঁরা কফি পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তাঁদের শরীরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে প্রতিরোধক্ষমতা৷ তাই একটা সময়ের পর আর কফি পান করলেই প্রার্থিত ফল পাবেন না৷
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, আগে আমরা দিনের মাঝে কখনও ক্লান্তি লাগলেই কফি পানে অভ্যস্ত ছিলাম৷ হালে খানিকটা বিজ্ঞাপনের দ্বারা চালিত হয়েই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাড়তি এনার্জির জন্য কফির দ্বারস্থ হওয়ার অভ্যেস তৈরি করেছে মানুষ৷ ইচ্ছে হলেই সেটা বদলে ফেলা যায়৷
এবার সব দিক খতিয়ে সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কী করবেন?
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম