নিউট্রিশনিস্টরা বলেন যে প্রতিদিন দুই চাচামচের বেশি তেল আমাদের শরীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তার মানে, আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪জন হলে মোট ৮ চাচামচ তেলে রোজের রান্না সেরে ফেলতে হবে। এক-আধদিন একটু বেশি কম হতে পারে, কিন্তু মোটের উপর এর মধ্যেই রান্না সারুন। যাঁরা রোজ একটু ঘি বা মাখন খান, তাঁরাও আন্দাজে একটা হিসেব করে ওই দু’ চামচের মধ্যেই সবটা ধরান।
আপনি কোন ধরনের রান্না করছেন, সেই বুঝে তেল বেছে নিতে হবে। উত্তর ভারতীয় ও বাঙালি রান্নায় সরষের তেল আর ঘিয়ের ব্যবহার বেশি। দক্ষিণে নারকেল তেল, গুজরাত-মহারাষ্ট্রে বাদাম তেলের ব্যবহার হয়। অন্ধ্র বা রাজস্থানের রান্নায় আবার তিল তেলের প্রাধান্য বেশি। সস্তায় কমদামি তেল খুঁজবেন না, ভালো তেল খুঁজে বের করুন।
তেলের ক্ষেত্রে আরও একটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব তেলই তো ফ্যাট – এই ফ্যাট থেকে যে অ্যাসিড বেরোয়, সেগুলির প্রভাব পড়ে আমাদের মেটাবলিক সিস্টেমের উপর। সবের মধ্যেই স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও কিছু অ্যান্টি অক্সিডান্ট থাকে। নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মোনো ও পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্য ভালো রাখে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে স্যাচুরেটেড বা ট্রান্স ফ্যাটের প্রভাবে।
সব তেলেরই একটা স্মোকিং পয়েন্ট থাকে, তার বেশি গরম করলেই তেলের রাসায়নিক গঠন বদলে যায় ও তা ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। যেমন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্মোকিং পয়েন্ট কম, তা স্যালাড বা মধ্য প্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের রান্নায় উপর থেকে ছড়িয়ে খাওয়া হয়। তা দিয়ে আলুভাজা রাঁধলেও বিষ খাওয়া হবে।
ভারতে বেশিরভাগ রান্নার সঙ্গেই ভাজাভুজির যোগ আছে, সেক্ষেত্রে আপনাকে এমন তেল ব্যবহার করতে হবে যার স্মোকিং পয়েন্ট খুব বেশি। সেদিক থেকে সরষের তেল বা বাদাম তেল খুব ভালো। দেশি ঘি বা নারকেল তেলের স্মোকিং পয়েন্টও বেশি। তবে অলিভ অয়েল কিন্তু ডিপ ফ্রাইংয়ের জন্য নয়।
আধুনিক ব্লেন্ডেড তেলগুলিও ভারতীয় রান্নার জন্য খুব ভালো। সানফ্লাওয়ার-রাইস ব্র্যান, ক্যানোলা-ফ্ল্যাক্সসিড মিলিয়েও খুব ভালো খাদ্যগুণ সম্পন্ন তেল বানানো হচ্ছে। ভারতীয় রান্নায় অলিভ-পোমেস তেলও ব্যবহার করা যায়।
. দু’ তিনরকম তেল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করুন।
. ডিপ ফ্রাই করা খাবার থেকে দূরে থাকুন – বাড়িতে বা বাইরে কখনওই বেশি ভাজাভুজি খাবেন না।
. একবার গরম করা তেল পুরোটা ব্যবহার করে ফেলুন। বার বার পুরোনো তেল ব্যবহার করা মানেই ট্রান্স ফ্যাট শরীরে ঢোকার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া।