বাঙালি লুচি খাবে না, তা কি হয়, বলুন? হ্যাঁ, অনেকেই বলবেন, আপনাদের মশাই কথার ঠিক নেই – এই বলেন ভাজাভুজি খেলেই শরীর খারাপ হয়, আবার এখন লুচি নিয়ে সাতকাহন শুরু করলেন! আমাদের জবাব হচ্ছে, যাঁরা সারা বছর মোটামুটি নিয়ম মেনে চলেন, তাঁরা মাসে এক-আধবার লুচি খেলে কিচ্ছু মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।
দুই, চেষ্টা করুন সকালের জলখাবারে লুচি খাওয়ার। ভাজাভুজি সকালের দিকে খেয়ে বাকি সময়টা হালকা খাবার খাবেন। জলখাবারটা ফল দিয়ে সেরে দিলে অবশ্য লাঞ্চেও লুচি খাওয়া যেতে পারে। লুচি আর মাংস একটু হেভি, তার আগে-পিছে আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই হবে।
তিন, যখনই খান না কেন, এক দিস্তে লুচি নিয়ে বসবেন না। তিন থেকে চারটি মাঝারি সাইজের লুচিতে দাঁড়ি টানুন। সঙ্গে নিশ্চয়ই আলুর দম, ছোলার ডাল, ছানার ডালনা, মাছের কালিয়া গোছের কিছু থাকবে? ব্যস, তাতেই পেট ভরে যাওয়া উচিত। আর যাঁরা রেস্তোরাঁর সাজিয়ে দেওয়া বাঙালি থালি খাওয়ার স্বপ্ন দেখেন? অর্থাৎ লুচি, পোলাও, ফ্রাই থেকে আরম্ভ করে মাংস ও পায়েস একসঙ্গে গলাধঃকরণ করার প্ল্যান করেছেন? তাঁদের ক্যালোরি ইনটেক অনেক বেশি হবে। পরের মিলের সময়ে খিদে না পেলে এড়িয়ে যান।
চার, লুচি যদি ফোলা না হয়, তা হলে কিন্তু তার মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে তেল জড়িয়ে থাকবে। সেটা খেতে ভালো হবে না এবং ন্যাতা-ন্যাতা, চিপসে থাকা লুচিতে ক্যালোরির মাত্রাও বেশি হবে। লুচি না ফোলার কয়েকটি কারণ আছে। সেগুলি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
. লুচির ময়দা মাখার সময়ে অল্প গরম জল ব্যবহার করুন। গরম জলে ময়দায় তাড়াতাড়ি গ্লুটেন ডেভেলপ করবে। অনেকে ছানার জল বা সারা রাত ঝুলিয়ে রাখার পর দই থেকে যে জল বেরোয়, সেটা গরম করেও ময়দা মাখেন। এই জলে প্রাকৃতিক হোয়ে প্রোটিন থাকে, তাতে লুচি পুষ্টিকর হয়।
. তিন কাপ ময়দা মাখলে এক টেবিলচামচের একটু কম ঘি ময়ান দেবেন। ময়ান বেশি হলে লুচি নরম হবে না, বেলতে গেলে কোনের দিকটা ফেটে যাবে।
. ময়দা মাখার পর খানিকক্ষণ ‘রেস্টিং টাইম’ দেওয়া খুব জরুরি। লুচির ময়দা ভালো মাখা হলে আপনার হাত থেকে ছেড়ে যাবে, হাত পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ময়দার তালটা গঠনগতভাবে শক্তপোক্ত হলেও হাত ডোবালে নরম লাগবে। তারপর অল্প ভেজা ন্যাকড়ায় ঢেকে ময়দাটা রেখে দিন। দশ মিনিট পর ভালো করে ময়দা ঠেসে নিতে হবে আর একবার। এতে ময়দার ইলাস্টিসিটি বাড়বে। লুচি ফুলবে তেলের সংস্পর্শে এলেই।
. লুচির গোলা খুব বড়ো কাটবেন না। ছোটো করে কাটুন। তাতে বেলতে সুবিধে হবে, ছোটো লুচি ভাজতে তেলও কম লাগে। পুরো লেচিতে বেলনির সমান প্রেশার দিয়ে সেটাকে ফ্ল্যাট করে নিন, গোলটা একটু টেরাব্যাঁকা হলেও অসুবিধে হবে না।
. তেলে লুচি ছাড়ার আগে তা ভালো করে গরম করে নিন। মাঝারি আঁচে লুচি ভাজতে হবে ডুবো তেলে। ভাজা শুরুর আগে অনেকগুলো বেলে নিয়ে তেল মাখানো থালায় ছড়িয়ে রাখুন। তাড়াহুড়ো করে ভাজতে যাবেন না। লুচি লাল হয়ে যাবে।
. ছোটো কড়ায় কম তেলে লুচি ভাজা যাবে। ছোটো ছোটো লুচি বেলুন। এই তেলটা কিন্তু একবার ঠান্ডা হয়ে গেলে আর ব্যবহার করা উচিত নয় – তা ট্রান্স ফ্যাটে পরিণত হবে। আপনি গাছের গোড়ায় দিতে পারেন অবশ্য। গরম থাকা অবস্থায় অন্য কিছুও ভেজে নেওয়া যায়।