যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন, তাঁরা তো কিটো ডায়েটের নাম শুনেইছেন। যাঁরা ঠিক ততটা খোঁজখবর রাখেন না, তাঁরাও সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে এতদিনে নিশ্চয়ই জেনে ফেলেছেন এই ডায়েট প্ল্যানের কথা। কিটো ডায়েট নিয়ে সারা দুনিয়ায় বেজায় শোরগোল শুরু হয়েছে, ওজন কমানোর এর চেয়ে ভালো উপায় নাকি নেই – তাই আগু-পিছু না ভেবেই অনেকে অন্ধভাবে অনুসরণ করছেন এই খাদ্যবিধি।
একটা সময়ে মৃগীরোগীদের চিকিৎসা করার জন্য এ ডায়েটের সাহায্য নেওয়া হত৷ চটজলদি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এই ডায়েট দারুণ কার্যকর, এমন একটা মতবাদ ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ কিটোজেনিক ডায়েট খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রচলিত ধারণা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে৷
প্রথমত, এই ডায়েটে ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় পদার্থ খাওয়ার ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই৷ বরং বলা হয় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার 70 শতাংশ জুড়ে থাকবে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, 20 শতাংশ আসবে প্রোটিন থেকে, মাত্র 10 শতাংশ জুড়ে থাকবে কার্বোহাইড্রেট৷ ক্যালোরি নিয়ে আপনাকে বিন্দুমাত্র চিন্তাভাবনা করতে হবে না৷ যত ইচ্ছে বাদাম, চিজ়, মাংস, ভাজাভুজি খেতে পারেন৷
সাধারণত খাবারে উপস্থিত কার্বোহাইড্রেট বা শ্বেতসার বিপাক ক্রিয়ার ফলে বদলে যায় গ্লুকোজ়ে, সেই গ্লুকোজ় থেকে শারীরবৃত্তীয় কাজগুলি সুষ্ঠুভাবে করার জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জির জোগান পাই আমরা৷ যে মুহূর্তে আপনি খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেবেন, তখনই লিভার ফ্যাটকে ভেঙে দেবে কিটোন আর ফ্যাটি অ্যাসিডে৷ গ্লুকোজ়ের বদলে এই কিটোন বডিই হয়ে উঠবে আপনার এনার্জির আধার৷ ফলে ওজন কমতে আরম্ভ করবে দ্রুত গতিতে।
এই পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, এমন এক অসামান্য ডায়েট প্ল্যন এতদিন অনুসরণ করেননি কেন? একটু সামলে যান প্লিজ। কারণ কিটোজেনিক ডায়েট নিয়ে ডায়েটিশিয়ানদের মধ্যেই দ্বিমত আছে৷ একদল মনে করেন, প্রত্যেকের শরীর একইভাবে কাজ করে না, তাই কিটোন উৎপাদনের নীতিটাও যে সকলের ক্ষেত্রেই খাটবে, তেমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না।
তা ছাড়া আচমকাই খাওয়াদাওয়ার রুটিনে বড়ো পরিবর্তন আনলে শরীরে প্রাথমিক একটা ধাক্কা লাগবেই এবং সেই সূত্রে বেশ খানিকটা ওজনও কমবে। কিন্তু মনের আনন্দে বিধিনিষেধ ছাড়াই হাই ফ্যাট খাবার দিনের পর দিন খেতে থাকলে লিভারে ফ্যাট জমতে পারে।
আপনার থেকে থেকেই জলতেষ্টা পাবে, ক্লান্ত বোধ করবেন, মাথা ঘুরবে, হার্টবিট বেড়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তা ছাড়া কিটোজেনিক ডায়েট মানতে গেলে কেবল দিনের চারটি প্রধান মিলের প্ল্যানিং করলেই চলবে না, আপনার প্রতিটি স্ন্যাক্সের প্ল্যানিংও তাল মিলিয়ে হওয়া চাই। দিনের পর দিন সেটা মেনে চলাও খুব সহজ নয়।
আর কোনওভাবে যদি টেনে নিয়েও যান, তা হলেও আপনার শরীরে মাসলের চেয়ে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হয়ে যাবে। অনেকে মনে করেন, খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট একেবারে ছেঁটে ফেললে স্ত্রী হরমোনের কার্যকারিতার উপরেও তার প্রভাব পড়ে। তাই খুব এক্সট্রিম কোনও ডায়েট ট্রাই করার চেয়ে সহজ, স্বাভাবিক এবং বিজ্ঞানসম্মত কোনও পদ্ধতির উপর আস্থাশীল হওয়াটাই বেশি কাজের নয় কী? আপনার বুদ্ধি কী বলে?