যাঁরা কোনওকালে টিফিনবাক্স নিয়ে অফিস যেতেন না এবং প্রাণভরে বাইরের খাবার খেতেন, তাঁরাও এখন পরিস্থিতির চাপে পড়ে খাবার সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তো? শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হয়ে পড়বেন চট করে। তাই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে জোর দিন।
সুষম খাবারের ব্যবস্থা করাটা কিন্তু মোটেই খুব কঠিন কাজ নয়। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে সারাদিনের খাবারে যেন প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং কার্বোহাইড্রেটের জোগান ঠিক থাকে। ধরুন, আপনার রোজ খাবার থেকে ১৪০০ ক্যালোরি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। তার ৬০ শতাংশ আসবে কার্বোহাইড্রেট থেকে, ১০-১২ শতাংশ হবে প্রোটিন আর ২০-২৫ শতাংশ ক্যালোরি জোগাবে ফ্যাট। সঙ্গে মিনারেল তো থাকবেই। দিনে তিনটে বড়ো আর দুটো ছোট ফাঁকে খাবার খেলে এনার্জির জোগান ঠিক থাকে।
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনার – তিনবার রাঁধা পোষায় না বলেই অনেকে ভরসা রাখেন প্যাকেটবন্দি প্রসেসড খাবারের উপর। সঙ্গে বাইরের খাবার তো আছেই। কিন্তু অল্প বুদ্ধি খরচ করলেই বাড়িতে ভালো খাবার তৈরি করে নিতে পারবেন। আসুন, আমরা কয়েকটি অপশন বলে দিই। এর মধ্যে থেকেই কিছু না কিছু অফিসের টিফিন বক্সেও ভরে নিতে পারেন।
জলখাবার বা ব্রেকফাস্ট: ফ্যাট আর প্রোটিনের জোগান দেবে দুধ/দই/ ছানা অথবা ডিম। সিরিয়াল হিসেবে বেছে নিন ওটস, চিড়ে বা মুড়ি। দুধে ওটস রান্না করতে পারেন পরিজের মতো করে। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হলে খেতে পারেন দই বা ছানা। চলবে ডিম সেদ্ধও। কোনও কোনওদিন সবজি মিশিয়ে চিড়ের পোলাও রান্না করতে পারেন, ভালো লাগবে সুজির উপমাও। সঙ্গে খান যে কোনও একটা ফল। তাতে রাফেজ পাবেন। ছাতু আর দই দিয়ে শরবত বানিয়ে নিন, সঙ্গে খান কোনও ফল। এক-আধদিন পাউরুটি বা হাতরুটিও খাওয়া যায়। রুটির সঙ্গে খান ছোলার ডাল বা পাঁচমিশেলি সবজির তরকারি।
লাঞ্চ: দুপুরের খাবার হবে সব চাইতে ভারী এবং পুষ্টিকর। সহজে ঝটপট যে সব টিফিন বানিয়ে নেওয়া যায়, তার মধ্যে পড়বে খিচুড়ি আর ফ্রায়েড রাইস। খিচুড়িতে আপনি চাল-ডাল দুটোই পাচ্ছেন। সঙ্গে দিন গাজর, ফুলকপি, ব্রকোলি, মটরশুঁটি, বিনস, পটল ইত্যাদি নানা সবজি। ঘি যোগ করুন – এর চেয়ে ব্যালেন্সড খাবার আর হয় না! চাইলে চিংড়ি মাছ, ছানা বা মাংসের ছোট টুকরো সাঁতলে নিয়েও এর মধ্যে দিতে পারেন। ফ্রায়েড রাইসে ভাতটা ভেজে নিন নানা সবজি, মাংসের টুকরো, ডিম দিয়ে। ভাতের বদলে দালিয়া, আটার ন্যুডলস বা কিনওয়া অথবা রোলড ওটস দিয়েও রান্নাটা করা যায়। সঙ্গে রায়তা আর স্যালাড নিয়ে নিলে আর কোনও চিন্তাই নেই!
হাতে যেদিন একটু বেশি সময় পাবেন, সেদিন তৈরি করে নিন স্টাফড পরোটা। ফ্রিজে পড়ে থাকা সব সবজি ভাপিয়ে আদা, ধনে, জিরে, রসুন, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা দিয়ে বেশ করে সাঁতলে নিন। তার পর সেই পুরটা দিয়ে বানান পরোটা। স্টাফিংয়ে ছানা বা ডালও দেওয়া যায়। সঙ্গে রায়তা খেতে পারেন।
ডিনার: ডিনারে একেবারে হালকা খাবার খান। স্যুপ-হাতরুটি-তরকারি, ভাত-ডাল-তরকারি, রুটি-ছানার ভুজিয়া, বা স্টু-রুটি যা হোক খান। কিন্তু ডিনারের পরিমাণ হবে সব চেয়ে কম। ভালো করে চিবিয়ে খাবার খাওয়াও জরুরি।
বাকি দুটো মিলে ফল আর বাদাম খান। রোজ ফল-সবজি মিলিয়ে যেন অন্তত পাঁচরকম জিনিস পাতে থাকে, তা দেখবেন। সঙ্গে হাতের কাছে রাখুন জলের বোতল। প্রচুর জল খাওয়াও একান্ত জরুরি। রান্নায় নানা ধরনের ফ্যাট ব্যবহার করুন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে – তবে তার মান যেন খুব ভালো হয়।