সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই নানা কাজে লেগে পড়েন? পেটে প্রথম দানা পড়তে পড়তে বেলা গড়িয়ে যায়? ভুল করছেন – এর সুদূরপ্রসারী ফল পড়বে আপনার স্বাস্থ্যে। কারণ জলখাবার বা প্রাতরাশ হচ্ছে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিল।
শরীরে সারাদিনের পরিশ্রমের উপযোগী ক্যালোরির জোগান দিতে ব্রেকফাস্টের জুড়ি নেই! আমাদের শরীরের ঘড়ি চালু হয় দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। মেটাবলিজমের হার তখন তুঙ্গে থাকে। তাই জলখাবারে ভারী কিছু খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা কমে।
দিনের শুরুটা এমন খাবার দিয়ে করা উচিত যা শরীরের ভিতরের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। তাই প্রথমেই খানিকটা জল খেতে হবে। তা বাড়তি অ্যাসিড ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তার পর হালকা গরম জলে লেবু আর মধু দিয়ে খেতে পারেন।
খালি পেটে মেথি-মৌরি ভেজানো জল, চিরতার জলও খাওয়ার রেওয়াজ আছে অনেক পরিবারেই। যাঁরা হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জিরে-জোয়ান ভেজানো জল খেতে বলা হয়। প্রতিটিই খুব কাজের। ভারতীয় মশলার খাদ্যগুণ হজমে সাহায্য করে, কমায় ইনফ্ল্যামেশন।
এর পর যে কোনও একটা ফল খাওয়া উচিত। চলবে আমলকী বা অ্যালো ভেরার জ্যুসও। অনেকে আমলকী, হলুদ, আদা খানিকটা জল দিয়ে একসঙ্গে পিষে ছেঁকে পান করেন। তাতে ইমিউনিটি বাড়ে, ফিরে আসে ত্বকের ঝলমলানি, চুলের গোড়া থেকে শক্ত হয়। সকালে আপেল, পেঁপে, কলা খেতে পারেন। ছোলা আর তাজা গুড় খাওয়াও খুব ভালো।
এবার শুরু করুন আপনার চা বা কফির রুটিন। সকালের দিকে চিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়াই ভালো। যাঁদের দুধে সমস্যা আছে, তাঁরা কালো বা সবুজ চা/কফিতে আস্থা রাখুন। বিস্কিট বাদ দিতে পারলে ভালো হয়, বদলে সামান্য কয়েকটি বাদাম বা একমুঠো নুন ও ইউরিয়াহীন মুড়ি খান।
খুব ভারী প্রাতরাশ করলে কিন্তু দৈনিক কাজকর্মে মন দিতে অসুবিধে হবে – কারণ খাবার হজম করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে আপনার পাচনযন্ত্র। তাই এমন খাবার বাছুন যা হালকা। দিনের প্রথম মিলেও প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থাকা বাঞ্ছনীয়।
যাঁরা দিনের বেশিরভাগটাই বসে কাজ করেন, তাঁদের মোটামুটি 1200-1300 ক্যালোরির প্রয়োজন হয় রোজ। আদর্শ ব্রেকফাস্টে থাকবে অন্ততপক্ষে 400 ক্যালোরি। তার অর্ধেক আসা উচিত কার্বোহাইড্রেট থেকে, 30 শতাংশ জোগাবে প্রোটিন এবং বাকি 20 শতাংশ আসবে ফ্যাট থেকে।
যাঁরা সকালের দিকে ওটস খান, তাঁরা জলের বদলে তা দুধ দিয়ে বানান। দুধের পরিমাণ এক কাপের বেশি হওয়ার প্রয়োজন নেই। সেই সঙ্গে মেশান ফল আর বাদামের কুচি। দুধ-মুড়ি-কলা, দই-চিড়ে-কলা, দুধ-কর্নফ্লেক্স-কলাও খেতে পারেন। সঙ্গে একটা ডিম খেতে পারেন। ডিমের কুসুম খুব ভালো ফ্যাটের উৎস, সেটি ফেলে দেওয়ার কোনও দরকার নেই।
যাঁরা টোস্ট খান, তাঁরা সামান্য মাখন বা পিনাট বাটার ব্যবহার করুন। টোস্টের উপর অ্যাভোকাডো পিউরিও লাগাতে পারেন। সেই সঙ্গে খান সেদ্ধ বা পোচ করা ডিম। অমলেট খেলে সামান্য তেল বা মাখনে তা বানিয়ে নিন।
রুটি আর নানা মরশুমি সবজি দিয়ে তরকারিও বানিয়ে নেওয়া যায়। সঙ্গে সেদ্ধ ডিম, ছানা বা এক বাটি সবজি দেওয়া ডালসেদ্ধ খেতে পারেন। খুব বেশি তেল দিয়ে রান্না করবেন না, তবে মশলা দেওয়া যেতে পারে। রোলড ওটস, ভুষিসমেত আটার রুটি, লাল চালের মুড়ি কিন্তু অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
যে কোনও প্যাকেটজাত খাবারেই কিন্তু বাড়তি চিনি ও নুন মেশানো হয় স্বাদ বাড়াতে। তাই সেগুলি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলেই বুদ্ধিমানের কাজ করবেন।