কোন বাঙালি কবে আটার লুচি বা পরোটা খেয়ে খুশি হয়েছে বলুন তো? বরং আমরা উত্তর ভারতীয়দের গাঢ় রঙের মোটা আটার পুরি দেখে হাসাহাসি করি। এখন তো আবার পাড়ার মোড়ে মোড়ে রোল, চাউমিন, পাস্তা, পেস্ট্রি, প্যাটির দোকান হয়েছে – সে সব সামগ্রীও সাদা ধপধপে, মিহি ময়দা ছাড়া তৈরি করা যায় না মোটে। তার পর আছে জলখাবারের পাউরুটি, টুকটাক মুখ চালানোর জন্য বিস্কিট বা কুকিজ।
তার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কম-বেশি সব পরিবারেই কারও না কারও ডায়াবেটিস আছে, বড়োরা তো বটেই, ছোটো ছোটো বাচ্চাদেরও ওজন বেশি। হাতের কাছে যে সব রেডি টু ইট স্ন্যাক্স থাকে বা তার বেশিরভাগই ময়দায় তৈরি। ফলে জিভের স্বাদ থাকলেও মার খাচ্ছে স্বাস্থ্য।
কেন ময়দার বদলে আটা বেছে নেওয়া উচিত?
আটা আর ময়দা, দুটোই পাওয়া যায় গম থেকে। গমের দানার যে তিনটি স্তর থাকে, তার সব ক’টির অস্তিত্ব থাকে আটায়। একেবারে বাইরের দু’টি স্তর, যাকে যথাক্রমে ব্র্যান আর হাস্ক বলে — আটায় বাড়তি ভিটামিন আর ফাইবার যোগ করে। টাটকার আটায় তৈরি রুটি খেতেও ভারী চমৎকার। ফাইবার বেশিক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে। ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা আচমকা বেড়ে যায় না।
ময়দায় ফাইবার তো থাকেই না, মেশানো হয় অন্য নানা রাসায়নিক
ময়দার রং একেবারে ধপধপে সাদা করে তোলার জন্য ব্লিচ ব্যবহার করা হয়। সেটা স্বাস্থ্যের পক্ষেও যে খুব একটা ভালো নয়, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? ময়দার নিজের কোনও স্বাদ নেই, তাই তা স্বাদু করে তোলার জন্য তেল/ ঘি বা কোনও ফ্যাট, নুন, চিনি মেশানো হয়। ফলে তার খাদ্যগুণ আরও কমে। তাই সম্ভব হলে ময়দার ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করুন। ময়দায় ফাইবার থাকে না বলে তা কনস্টিপেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ময়দার বদলে সব ক্ষেত্রে আটা ব্যবহার করা কি সম্ভব?
সম্ভব। তবে স্বাদে, খাবারের টেক্সচারে ফারাক আসবেই। উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই বলা যাক পাউরুটির কথা। আজকাল অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছেন, তাঁরা আটার পাউরুটি কেনেন বাজার থেকে। কিন্তু যে ব্রাউন ব্রেড আটার তৈরি, তা কখনও নরম তুলতুলে হবে না, প্যাকেটে দিনের পর দিন ভালোও থাকবে না। আটা দিয়ে বিস্কিট, কেক বা কুকি বানানো সম্ভব, কিন্তু তা ময়দার মতো নরম হবে না কখনওই – বাড়তি ফাইবারের কারণে গঠনগত ফারাক থাকবে।
দুটো দিক বজায় রাখার জন্য কী করা উচিত?
স্বাদ আর স্বাস্থ্য দুটো দিক বজায় রাখতে গেলে আপনাকে ময়দা খাওয়া কমাতে হবে, বাড়াতে হবে আটার ব্যবহার। সাদা ধবধবে ফুলকো লুচি এক-আধদিন খেলেন ঠিক আছে, কিন্তু রোজের খাবার হিসেবে সেটা অচল। কেক-বিস্কিটের বদলে মুড়ি বা চিড়ে খান। নিমকি-সিঙাড়া, ন্যুডলস, মোমোও মাঝে-সাঝে চলতে পারে। আটা আর ময়দা মিশিয়ে খাবার বানাতে পারেন, সেটা খেতেও মন্দ হয় না।
ময়দা খেলে সঙ্গে এমন কিছু খাওয়া উচিত যা ফাইবারে সমৃদ্ধ। লুচি-আলুর দম বা মাংস খেলে স্যালাড খেতে হবে আগে। চিকেন রোল খেয়েই কোল্ড ড্রিঙ্কে চুমুক দেবেন না – তাতে ক্যালোরি ইনটেক বাড়বে। খানিক পরে ফল খেতে পারেন।
মনে রাখবেন, কোনও খাবারই ভিলেন হয় না – কম-সম করে খান। হাঁটাচলা করুন, সারাদিন এক জায়গায় বসে থাকবেন না। তাতে শরীর ভালো থাকবে বেশিদিন।