সুপারফুডের কোনও বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়৷ সাধারণত যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও অ্যান্টিঅক্সিডান্ট থাকে, সেগুলিকেই এই তকমা দেওয়া হয়৷ পুষ্টিগুণ আপনার রোজের খাদ্যতালিকাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে, আর অ্যান্টিঅক্সিডান্ট লড়াই করবে ফ্রি রাডিক্যালসের ফলে হওয়া যে কোনও ধরনের ক্ষতির সঙ্গে৷
বেশিরভাগ সুপারফুডের সঙ্গেই আমাদের পরিচয় আছে একেবারে শিশুকাল থেকেই৷ মায়েরা চেপে ধরে আমাদের শাক খাওয়াতেন, ইচ্ছে না থাকলেও মুখে গুঁজে দিতেন আমলকীর টুকরো, বারবার বলতেন তাজা ফল খেতে… তখন হয়তো কোনও কথাটাই কানে তোলেননি, কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝবেন যে প্রতিটির সঙ্গেই কোনও না কোনওভাবে সুস্থ থাকার যোগ আছে৷
উদাহরণ চাই? শাকে প্রচুর ফাইবার আছে৷ ভাতের সঙ্গে আপনি একবাটি পালংশাক খেলে নিশ্চিতভাবেই পেট ভরবে তাড়াতাড়ি এবং পেট ভরে যাওয়ার কারণেই আপনি পরেরবার এক হাতা ভাত পাতে নেবেন না৷ বিকেলবেলা চিপস, চানাচুর না খেয়ে যদি বাদাম খান, তা হলে শরীর প্রয়োজনীয় ফ্যাট পাবে, কিন্তু বাড়তি মেদ জমবে না কোমরের চারপাশে৷
আমাদের আশপাশে হাত বাড়ালেই যে সব সুপারফুড পাওয়া যায়, তাদের কয়েকটিকে চিনে নিন।
আমলকী: আমলকী ভিটামিন সি-তে ভরপুর এবং খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে৷ সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে, আকাই বেরি, গোজি বেরি, ব্লুবেরির মতো মূল্যবান ফলের চেয়ে আমলকীতে বহুগুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডান্ট মেলে৷ মহিলাদের আরও বেশি করে আমলকী খাওয়া প্রয়োজন কারণ তা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর৷
পালংশাক: অন্য সব শাকের চেয়ে পালংয়ে ভিটামিন, মিনারেলের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে পালং পাওয়াও যায় বাজারে, তাই প্রাণ ভরে খান। স্যালাড, জ্যুস, স্যুপ, চচ্চড়ি, পালং পনির, পরোটা… নানাভাবে খাওয়া যায়।
নারকেল তেল: নারকেল তেলের সুবিধেটা হচ্ছে যে, এটি আমাদের শরীরে ফ্যাট হিসেবে চট করে জমে না৷ নারকেল তেলের স্যাচুরেটেড ফ্যাট বাড়ায় বন্ধু কোলেস্টেরলের পরিমাণ এবং এর মধ্যে উপস্থিত লরিক অ্যাসিডও শরীর ভালো রাখতে কাজে দেয়৷ খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না সরষের তেলও৷ সবচেয়ে ভালো হয় সব ধরনের তেল মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারলে৷ কোনও রান্নাই যেন তেল গরগরে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখাটা অনেক বেশি জরুরি৷
ফ্ল্যাক্সসিড: কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুব কম, আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার৷ আপনার রোজের সিরিয়ালের সঙ্গে শুকনো খোলায় সেঁকে নেওয়া ফ্ল্যাক্সসিড যোগ করে দেখতে পারেন৷ বিকেলবেলা যখন মুখ চালানোর জন্য সুস্বাদু কিছু খেতে ইচ্ছে করে, তখনও ফ্ল্যাক্সসিড, খোসা ছাড়ানো কুমড়োর বীজ ইত্যাদি খেতে পারেন৷
সজনে: সজনের ডাঁটা, ফুল, পাতা সব কিছুই খুব উপকারী৷ প্রচুর ক্যালশিয়াম থাকে এর মধ্যে, 40-এর পর থেকে মেয়েদের হাড় ক্ষয়ে যেতে আরম্ভ করে৷ তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সজনের কোনও না কোনও পদ রাখা বাঞ্ছনীয়৷ ডাঁটা চিবিয়ে খেতে হয়, ফলে মুখে লালা নিঃসরণের হার বাড়ে এবং সেই কারণে বদহজমের সমস্যা আপনাকে ভোগাবে না কখনও৷ এর পাতা শুকনো এবং গুঁড়ো করে সারা বছর খেতে পারেন।
আমন্ড: আমন্ডে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম আর তামা থাকে৷ বাদামে ক্যালোরির পরিমাণ খুব একটা কম নয়, কিন্তু তাও যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের খাদ্যতালিকায় আমন্ড ও আখরোট রাখা যেতেই পারে৷ আমন্ড বা আখরোট পেট ভরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি, ফলে বেশি খাওয়া আটকানো যায়৷ যাঁদের দুধ সহ্য হয় না, তাঁরা জল দিয়ে আমন্ড পিষে তারপর ছেঁকে নিয়ে আমন্ড মিল্কও খেতে পারেন৷ বাদাম কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়, নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ নিয়ে খান৷ সবচেয়ে ভালো হয় যদি ওটমিল, কর্নফ্লেক্সের সঙ্গে আমন্ড খেতে পারেন তা হলে৷