রাতের বেলায় ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয় – এ কথাটা ঠিক। কারণ সন্ধের পর আমাদের মেটাবলিজমের হার মন্দীভূত বা স্লো হয়ে যায়। তাই ভারী খাবার হজমে অসুবিধে হয়, অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীর কাজে লাগাতে পারে না, রাতে ঘুম আসে না।
কিন্তু তাই বলে আবার ভাত/ রুটি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেলেই ওজন বাড়বে, তাই রাত নামলেই চিত্রতারকাদের মতো স্যুপ আর স্যালাড খেয়ে থাকতে হবে – এ কথাটাও নেহাতই ভিত্তিহীন। তাঁদের ক্যামেরায় সুন্দর থাকার জন্য বিশেষ এক ধরনের চেহারা মেনটেন করতে হয়। তাঁরা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে রীতিমতো মেপে-জুপে খাবার খান, দরকারে সাপ্লিমেন্ট নেন। সে সবের সঙ্গে সাধারণ মানুষের রুটিনটাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়।
বরং রাতে যদি আপনি হালকা ডাল বা মাছের ঝোল, স্যালাডসহ অল্প ভাত বা একটি/ দুটি রুটি খান এবং তার অন্ততপক্ষে ঘণ্টা দুই পরে ঘুমোতে যান, তা হলে নিশ্চিতভাবেই শরীর মাসল রিপেয়ার করার মতো এনার্জি পাবে। ফলে পরদিন সকালে যখন ঘুম থেকে উঠবেন, অনেক ফ্রেশ লাগবে।
কার্বোহাইড্রেট অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট – সারাদিনে আমরা যতবার খাবার খাই, তার সব ক’টির মধ্যেই কিছু পরিমাণ কার্ব থাকা জরুরি। তবে রিফাইন্ড কার্ব নিশ্চিতভাবেই ভালো নয় – ময়দার পরোটার বদলে ভুষিসুদ্ধ আটার রুটি অনেক স্বাস্থ্যকর অপশন। পালিশ করা চালের জায়গায় ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত খেতে পারলেও উপকার পাবেন। সেই সঙ্গে খানিকটা প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও রাফেজও শরীরে যাওয়া জরুরি।
রাতেরবেলা কার্ব খেলে আপনার স্ট্রেস কমবে, ফ্যাট বার্ন করার হার বাড়বে, তৈরি হবে মাসল। কীভাবে জানতে চান? তার অবশ্য আপনাকে জানতে হবে আমাদের শরীর স্ট্রেসের কবলে পড়ে কীভাবে। আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের কাজ হয় মূলত দু’ভাগে – প্যারা সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম শরীরকে বিশ্রাম, পরিপাক, সেরে ওঠার মতো কাজগুলি করার আদেশ দেয়। আর সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম বলে অ্যালার্ট থাকতে, যাতে দরকারমতো বিপদের সঙ্গে লড়াই করা বা পালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
যখন আমরা স্ট্রেসের কবলে পড়ি, তখন আমাদের শরীর থেকে কর্টিসল নামক একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। কর্টিসলের প্রভাবেই আমরা কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করা হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারি – তা সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে অ্যাকটিভেট করে। যদি আপনার শরীর সময়মতো প্যারা সিম্প্যাথেটিক মোডে ঢুকতে না পারে, তা হলেই স্ট্রেসের বাড়াবাড়ি হয়।
দিনের বেলা কাজের সময় আমাদের কর্টিসলের উৎপাদন দরকার, কারণ তা হলে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দরকারি দায়িত্ব পালন করা যাবে। রাতের বেলা আবার কর্টিসল কমলে ভালো ঘুম আসবে, যাঁরা মেডিটেট করেন তাঁরা মন দিতে পারবেন ধ্যানে।
কার্বোহাইড্রেট কর্টিসলের প্রভাব ভোঁতা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাই রাতে অবশ্যই ভাত/ রুটি খান। চেষ্টা করুন সন্ধে সাড়ে সাতটা-আটটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়ার। তার পর পায়চারি করুন খানিকক্ষণ – তাতে হজমও ভালো হবে। যাঁরা রাতের বেলায় আচমকা ক্রেভিং হলেই পিজা বা কেক খেয়ে ফেলেন আর পরে আফসোস করেন, তাঁরা বরং ভালো করে ডিনার করার অভ্যেস করুন। তবে হ্যাঁ, খুব পেট ঠেসে খাবেন না, রাতে তো একেবারেই না।