ইদানীং স্বাস্থ্য ভালো রাখাটাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। গবেষকেরা হাতে-কলমে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, আপনার পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে পুরো শরীর সুস্থ থাকবে। কারণ খাবার থেকেই আমাদের শরীর এনার্জি পায়, গোটা মেশিনটা ঠিকভাবে চলে। আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন এবং তার পাচন ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়।
পেট ভালো রাখতে গেলে ফারমেন্টেড, অর্থাৎ গেঁজিয়ে ওঠা খাবার খাওয়া একান্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। আমাদের দেশে অবশ্য এমন খাবারের চল বহুদিনের। যেমন ধরুন দই বা দোসার ঘোল। আমরা বরাবর জানি, এগুলি গুরুপাক খাবার হজম করতে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে একান্ত উপকারি। পরে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, দই হচ্ছে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রোবায়োটিক। এর ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
আচার তৈরির সময় ফল বা সবজি জারিয়ে রাখা হয় নুন, মিষ্টি, তেলের মিশ্রণে। তা রোদে ফেলে রাখা হয় দিনের পর দিন। এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় তার মধ্যে কার্যকর হয়ে ওঠে জরুরি ব্যাকটেরিয়া। তাই উত্তর ভারতের বহু জায়গায় রোজের খাবারের সঙ্গে আচার মাস্ট! দক্ষিণী দোসা বা ইডলির ব্যাটার গেঁজিয়ে নেওয়া হয় রাতভর। দইবড়া বা ধোকলার মতো জলখাবারও তো ফারমেন্টেড! আমাদের বাংলার পান্তাভাত-ও পিছিয়ে থাকবে না কিন্তু!
পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে কী হয়? খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ যথাযথভাবে শোষণ করতে পারলে আপনার ইমিউনিটি বা প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। কমে কোলেস্টেরল, ইনফ্ল্যামেশন, ব্লাড সুগার। জাপানের মিসো, কোরিয়ার কিমচি, চিনে রান্নায় ব্যবহৃত সোয়াবিন পেস্ট, সিউয়ারক্রুট – সবই গেঁজিয়ে তোলা খাবারের উদাহরণ।
ভারতসহ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে এই জাতীয় খাবার রোজের খাদ্যতালিকার অঙ্গ। বিদেশেও শসা, গাজর পেঁয়াজ ইত্যাদি নুন-চিনি-ভিনিগারের জলে ভিজিয়ে পিকল করে রাখা হয়, অলিভ আর হালাপেনোও এইভাবে বিক্রি হয় সারা পৃথিবীতে। সাওয়ারডো ব্রেড হচ্ছে গেঁজে ওঠা আটার পাউরুটি – স্বাস্থ্য সচেতনরা এই রুটিকেই সবচেয়ে বেশি নম্বর দিচ্ছেন আজকাল।
তবে প্রোবায়োটিক আপনার পেটে যে ধরনের ব্যাকটেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত ঘটায়, তার ভালো-মন্দ খাওয়াদাওয়ার জোগান চাই। সেই খাবারকে বলে প্রিবায়োটিক। মধু, টোম্যাটো, গম, পেঁয়াজ, রসুন চেনা প্রিবায়োটিক। তা ছাড়া ডাল, ফল আর সবজির মধ্যেও তার অস্তিত্ব থাকে। তাই রোজের খাবার তালিকায় এই উপাদানগুলি আছে কিনা দেখে নেবেন। চেষ্টা করুন স্থানীয় খাবার খাওয়ার, তা শরীর ভালো রাখতে সত্যিই সাহায্য করবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষাও এ তথ্যকেই সমর্থন জানিয়েছে। তারা কিছু মানুষের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত প্রোবায়োটিক রেখে দেখেছে, তাঁদের পেটের স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে আগের চেয়ে। তাঁরা নানা ক্রনিক সমস্যার সঙ্গে সহজে লড়াই করতে পারছেন এবং কমছে ইনফ্ল্যামেশন।