অনেকেই ভাববেন, আচ্ছা লোক তো মশাই আপনারা! সেকেন্ড ওয়েভের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে জেরবার অবস্থা, আবার থার্ড ওয়েভের কথা ভাবছেন? এই পর্বেই অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই, হাসপাতালে বেড নেই – আবার তিন নম্বর সার্জের কথা ভাবছেন কোন আক্কেলে?
এখানে একটা ছোট্ট তথ্য জানিয়ে রাখা যাক। কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ – যেটি কিনা এদেশের একটি সর্বজনমান্য গবেষণা সংস্থা – পূর্বাভাস দিয়েছে যে, মুম্বইতে আগামী জুলাই- আগস্ট মাসেই আছড়ে পড়তে পারে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ।
আপাতত সেখানে ৫ মে পর্যন্ত লকডাউনের মতো কঠিন নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে – তাই সামলাতেই মানুষের প্রাণান্তকর অবস্থা, তার মধ্যে আবার তৃতীয় ঢেউ! মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক কিন্তু এই পূর্বাভাসকে দুচ্ছাই করে উড়িয়ে না দিয়ে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে জেলায় জেলায় পরিকাঠামো তৈরির কাজে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা যাক, আপাতত পশ্চিমবঙ্গে সেকেন্ড ওয়েভ সবে দাঁত-নখ বের করতে আরম্ভ করেছেমাত্র। তার পূর্ণ স্বরূপ প্রকাশ পেতে দেরি আছে। তার পর একটা সময়ে সংক্রমণ কমতে আরম্ভ করবে গত বারের মতোই।
তখনই মানুষ হাঁফ ছাড়বে। ডাক্তাররা ক’দিন ঘুমোনোর অবসর পাবেন। কিছু অত্যুৎসাহী পুরী-দীঘা-দার্জিলিং চলে যাবেন হুশ করে, ফের জমিয়ে বন্ধু, আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়া, মল-পার্কে ঘোরা চালু হবে। ‘কোভিড হলে দেখা যাবে, এভাবে পারা যায় নাকি?’ গোছের একটা মনোভাব ফের জাঁকিয়ে বসবে। আর সেই ছিদ্র গলেই আবার আক্রমণ হানবে ভাইরাসের আরও নতুন, মিউটেটেড স্ট্রেন।
বার বার কিন্তু সমস্ত সরকারি স্তরে বলা হচ্ছে, কোভিড ঠেকাতে গেলে কিছু নিয়ম মানা একান্ত জরুরি – তা একেবারেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। সংক্রমণ বাড়লে চরম ‘হায় হায়’ হচ্ছে, কমে গেলেই আমরা সব বিধিনিষেধ হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছি। আর সেটাই চরম ভুল হচ্ছে।
হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে প্রবল গরমে এসি না চালিয়ে, দরজা-জানলা খুলে, মাস্ক পরে থাকা কষ্টকর। এটাও ঠিক যে, দিনের পর দিন ঘরে আটকে থাকতে গিয়ে কারওই মাথা ঠিক থাকছে না। তাই সংক্রমণ কমলেই একটু বেড়িয়ে আসতে ইচ্ছে করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে মানুষ না বেরোলে, সবাই চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে।
কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি অতিমারির সঙ্গে লড়াই করছেন। স্রেফ বেঁচে থাকাটাই এখন কঠিন। মিউটেশনের পর ভাইরাস অনেক শক্তিশালী। সে অনেক দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, রোগ তাড়াতাড়ি খুব সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে। একান্ত প্রয়োজন না পড়লে বাড়ির বাইরে যাওয়া কমাতে হবেই।
. আপনি এখন বিয়েবাড়িতে, পার্টিতে বা পাহাড়-সমুদ্রে যেতে পারবেন না। নিজেকে সাবধানে রাখতে হবেই – সরকার লকডাউন করুক না করুক, আপনি নিজের মাথায় এই কথাগুলি গেঁথে নিলে নিরাপদ থাকবেন।
. হ্যাঁ, সারাক্ষণ নিজেকে বন্ধ করে রাখা, বাঁচিয়ে চলার মধ্যে সাঙ্ঘাতিক একটা মানসিক চাপ আছে। ক্লান্তি আসবেই। কিন্তু যাঁরা পরিজনের জন্য হাসপাতালের একটা বেড খুঁজে পেতে মাথা খুঁড়ে মরছেন বা কাছের মানুষের মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে দু’দিন-তিনদিন নাজেহাল হচ্ছেন তাঁদের চেয়েও কি আপনি খারাপ আছেন?
. যত দিন সংক্রমণ আর রোগের দাপট না কমছে, ততদিন আমাদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। মনে সারাক্ষণ টেনশন থাকবে, আশঙ্কা থাকবে। তাও নিজেকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।
. ভ্যাকসিনেশনের উপর আস্থা রাখুন। আগামী কিছুদিন টিকাকরণ ব্যবস্থা খোঁড়াবে, তাতে ঘাবড়াবেন না। দিন ১৫-২০-র মধ্যে টিকা নেওয়া সম্ভব হলে খুব ভালো, না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিন।