প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সন্তান সঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেবে, তার সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে সে সিদ্ধান্ত তার একার। অভিভাবক তাঁর মত জানাতে পারেন, কিন্তু সন্তান যদি তা মানতে নারাজ হয়, তা হলে তাকে বিরক্ত করা যাবে না। এমনই রায় দিয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট।
এখনও এ দেশে জীবনসঙ্গী হিসেবে সন্তান কাকে বেছে নেবে, তা নিয়ে মা-বাবা তো বটেই, অন্য আত্মীয়স্বজনদেরও নানা বক্তব্য থাকে। সন্তান নিজের পছন্দে বিয়ে করলে তাকে সম্পত্তি থেকে বেদখল করা থেকে আরম্ভ করে জাত-পাতের জিগির তুলে ‘অনার কিলিং’ – সব চলে। বহু ক্ষেত্রেই সমস্যা কোর্টের চৌহদ্দিতে আসে না, তার আগেই পরিবার মাঝে পড়ে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।
সেদিক থেকে দেখলে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। হরিয়ানার জিন্দ জেলার ১৯ বছরের একটি ছেলে ও ১৮ বছরের মেয়ে পরস্পরের প্রেমে পড়ে, বাড়ির লোক সম্পর্কে আপত্তি জানানোয় তারা একসঙ্গে থাকতে আরম্ভ করে। ছেলেটির বয়স ২১ না হওয়ায় আইনত বিয়ে করার অধিকার পায়নি তারা। পরিবার তখনও তাদের আলাদা করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলেটিকে বারংবার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাই নিরাপত্তার অভাব থেকে আদালতে মামলা করে এই তরুণ দম্পতি।
শুনানির শেষে রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি অলকা সারিন বলেছেন, অনেক সময়েই বাবা-মা সমাজের ভয়ে সন্তানের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেও তাঁরা প্রেমিক-প্রেমিকাকে আলাদা করে দিতে চান। কিন্তু কোনও কারণেই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপর নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এমনকী অভিভাবকেরও সে অধিকার নেই।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ‘রাইট টু লাইফ’ বা নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচার অধিকার আছে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকেরই। সেই অধিকার বলেই ১৮ পেরনোর পর ইচ্ছেমতো জীবনসঙ্গীও বেছে নেওয়া যায়। তাতে সমাজের আপত্তি থাকলেও আইনের চোখে তা বৈধ বলেই গণ্য হবে। “ছেলেটির বিয়ের বয়স হয়নি বলেই তাকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না, সে তার বেছে নেওয়া সঙ্গিনীর সঙ্গে থাকতেই পারে,’’ রায় দিয়েছেন বিচারপতি সারিন।