রাস্তায় কুকুর চিৎকার করছে? তার গায়ে গরম জল ঢেলে দাও বারান্দা থেকে! পাড়ার হুলো বেড়ালটা রোজ এসে রান্নাঘরে বিরক্ত করছে? একদিন মাছের মুড়োর মধ্যে বিষ মাখিয়ে রেখে দাও… যাতে খেয়েই সে পরপারে যাত্রা করে! এমন সব বিচিত্র অভ্যেস থাকলে কিন্তু সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে — কারণ দীর্ঘদিনের পুরোনো আইন বদলে প্রাণির উপর হওয়া অত্যাচারকে কঠোর শাস্তিযোগ্য করে তোলার তোড়জোড় শুরু হয়েছে সরকারি স্তরে।
মানুষ বরাবরই মনে করে যে এই পৃথিবীটা তার একার বসবাসের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। তাই ক্ষুধার্ত বন্যপ্রাণির থেকে ফসল বাঁচাতে চাষের মাঠে বোমা বা পটকা ছড়িয়ে রাখে নির্দ্বিধায়, খেয়ে প্রাণিটি মারা গেলে শান্তি পায়। এতদিন পর্যন্ত কোনও প্রাণিকে আহত করলে বা মেরে ফেললে শাস্তি হিসেবে জরিমানা হত মাত্র ৫০ টাকা! তাই নির্বিচারে চলছিল ক্রূরতা।
বাড়িতে শখের বশে পশু-পাখি রেখে পোষ্যকে অবহেলা করছেন – এমনটাও কিন্তু আকচার দেখা যায়। সেটাও কম বড়ো অপরাধ নয়! বাড়িতে পোষ্য তখনই আনা উচিত, যখন আপনি তার যথাযথ দেখভাল করতে পারবেন, তাকে পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে দেখবেন। তার খেয়াল রাখতে হবে সন্তানের মতো। তাই বলা হয়, হুট করে কোনও পোষ্য আনবেন না, বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলুন, তাঁদের মতামত নিন – সবাই রাজি হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ভারত সরকার নড়েচড়ে বসেছে সম্প্রতি, ৬০ বছরের পুরোনো প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমালস অ্যাক্টে বদল আনতে তৈরি হয়েছে নয়া খসড়া। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে কোনও পশুর উপর হওয়া ক্রূরতা প্রমাণ করতে পারলে অপরাধীকে ৭৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে, ক্ষেত্রবিশেষে মৃত পশুর দামের তিনগুণ টাকাও দিতে হতে পারে। অপরাধ গুরুতর হলে পাঁচ বছরের হাজতবাস বা হাজত ও জরিমানা দুটোই একসঙ্গে লাগু হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে।
কোনও পশুকে লাথি মারা, অত্যাচার করা, না খেতে দিয়ে বেঁধে রাখা, গাড়ি বা বাইক চাপা দেওয়া, অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে বাধ্য করা, খাঁচায় বন্দি রাখার সাজা কী ছিল জানেন? মাত্র ১০টাকা – ৫০ টাকা ফাইন! তার উপর পশু তো আর কথা বলতে পারে না, তাই বেশিরভাগ অপরাধ প্রমাণও হত না। সেই সঙ্গে চেষ্টা চলছে রাজ্য অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার বোর্ডগুলিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার দেওয়ার, তাতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।