বাড়ছে একাকীত্ব – এর চেয়ে বড়ো সত্য আমাদের জীবনে আর নেই। আপনি সম্পর্কে থাকুন, বিবাহিত হোন, সন্তান নিয়ে সুখে ঘর করুন – কিচ্ছু যায় আসে না। যে কোনও বয়সে, যে কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ একাকীত্বে ভুগতে পারেন।
সারাক্ষণ নিজের সঙ্গে একা থাকতে গিয়ে বিগড়ে যাচ্ছে মানসিক স্থৈর্য — গোটা দুনিয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আত্মহত্যা। কোভিড পরিস্থিতিতে আইসোলেশনে থাকতে গিয়ে সমস্যা আরও বেড়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে জাপান সম্প্রতি নিয়োগ করেছে ‘লোনলিনেস মিনিস্টার’। ব্রিটেনে অবশ্য ২০১৮ সাল থেকেই একাকীত্বের সমস্যা সামলানোর জন্য তৈরি হয়েছিল বিশেষ মন্ত্রক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিডের নিরাময় খোঁজার পাশাপাশি মানসিক স্থিতি বজায় রাখার উপায় খুঁজে বের করতে বিশেষ যত্নশীল হতে বলেছে প্রতিটি সদস্য দেশকে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, জাপানে কোভিডে মৃতের প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন!
স্রেফ সরকার বা সামাজিক প্রকল্পের উপর ভরসা রেখে লাভ নেই, একাকীত্ব দূর করতে চাইলে সচেষ্ট হতে হবে সবাইকে। আগের মতো জয়েন্ট ফ্যামিলি আর নেই, সবাই স্রেফ নিজেরটুকু নিয়ে ব্যস্ত! আপনার আশে-পাশে তাকালেই এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাবেন যাঁরা মনের কথা কাউকে খুলে বলতে পারেন না, তাঁদের পাশে দাঁড়ান, বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত।
যদি আপনি একাকীত্বে ভোগেন, তা হলে কী করবেন?
১. যাঁরা নিজের খোলসের মধ্যে ঢুকে থাকেন, তাঁরা কথা বলেন না একেবারেই। ভেবে দেখুন তো, শেষ কার সঙ্গে মন খুলে আড্ডা মেরেছেন বা কথা বলেছেন? আশপাশের মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতা চালান, মনের দিক থেকে অনেক হালকা লাগবে। বাজারে-দোকানে যখন যাবেন, তখন দোকানির সঙ্গে কথা বলে শুরু করতে পারেন।
২. মনোবিদের সাহায্য নিন দেরি না করে, নিয়মিত সেশনে হাজির হোন। তিনি আপনাকে সঠিক দিশা দেখাতে পারবেন। তা ছাড়া কাউন্সেলাররা অনেক সময়েই গ্রুপ থেরাপির আয়োজন করেন, সেখানে সমমানসিকতার মানুষ খুঁজে পাবেন।
৩. কোনও অ্যাকটিভির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নিন। ব্যায়াম করলে মন ভালো থাকে, নিয়মিত কোনও পার্কে মর্নিং বা ইভনিং ওয়াকে যান – ঠিক সঙ্গী-সাথী পেয়ে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে সিনেমা-থিয়েটার দেখা, কাছে-পিঠে বেড়ানোর অভ্যেস থাকলেও খুব ভালো হয়। বাড়ির বাইরে বেরনোর উপায় নেই? অনলাইন অ্যাকটিভিটি বাড়ান, সেখানেও মনের মতো কাউকে পেয়ে যাবেন ঠিক।
৪. যাঁরা কথা বলতে পারেন না চট করে, তাঁরা একটা ডায়েরি বা জার্নালে নিজের মনের কথা লিখে রাখতে আরম্ভ করুন, তাতেও খুব ভালো কাজ দেবে।
৫. কখনও গাছ বা পোষ্য রাখার কথা ভেবে দেখেছেন? এরাও কিন্তু আপনার দিন-রাতগুলিকে ভরিয়ে তুলতে পারে পরম আনন্দে। তবে যাঁরা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা আনফিট, তাঁরা পোষ্যের দেখাশোনার জন্য কারও সাহায্য নেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন।